জীবনের প্রথম পডকাস্ট ভিডিয়োতে অকপট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
এক বার নয়, পর পর তিন বার দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। আর প্রতি বারই নতুন ধরনের উপলব্ধি হয়েছে তাঁর। একটি সাক্ষাৎকারে সেই উপলব্ধি ভাগ করে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন অভিজ্ঞতাও শুনিয়েছেন। মোদী বলেছেন, প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সকলে তাঁকে দেখছিলেন, তাঁকে বোঝার চেষ্টা করছিলেন। আর তিনি দেখছিলেন রাজধানী দিল্লিকে।
শুক্রবার মোদীর সাক্ষাৎকারের দু’ঘণ্টার ভিডিয়ো প্রকাশিত হয়েছে। সকালে এই সাক্ষাৎকারেরই মিনিট দুয়েকের একটি ‘প্রোমো’ প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘ভগবান নই, আমি মানুষই’’। যা ইতিমধ্যে চর্চার কেন্দ্রে। ওই সাক্ষাৎকারেই তাঁকে তিন বারের প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। মোদী বলেছেন, ‘‘প্রথম বার তো আমাকে সবাই বোঝার চেষ্টা করছিল। আমি দিল্লিকে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। দ্বিতীয় বার অতীতের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি বিচার বিবেচনা করার চেষ্টা করতাম। অতীতের দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগাতাম। কিন্তু তৃতীয় বারে আমার ভাবনা বদলে গিয়েছে। এখন আমার মনোবল আরও জোরদার এবং স্বপ্নগুলোর পরিধিও বেড়ে গিয়েছে।’’
২০৪৭ সালের মধ্যে দেশের সমস্ত সমস্যার সমাধান করে ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তুলতে চান মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি প্রকল্পের ১০০ শতাংশ পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে। এটাই আসল সামাজিক ন্যায় এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। এর চালিকাশক্তি এআই— অ্যাসপিরেশনাল ইন্ডিয়া (উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারত)।
‘তুই’ বলার কেউ নেই
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁকে আর ‘তুই’ বলে ডাকার কেউ নেই, উপলব্ধি মোদীর। সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ‘বন্ধু’ হারিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আমি ছোটবেলার অনেক বন্ধুকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু ওরা সকলে আমাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখছিল। আমাকে ‘তুই’ বলে ডাকার মতো আর কেউ নেই।’’
‘কাপড়ও কেচেছি’
দু’ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে জীবনের অনেক গল্প বলেছেন মোদী। ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় আমি কাপড় কাচতাম। বাড়ির সকলের জামাকাপড় আমাকেই কাচতে হত। তার জন্য আমি পুকুরেও যেতাম।’’
চিনা দূতাবাসে চিঠি
এক বার চিনা দূতাবাসে চিঠিও লিখেছিলেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বডনগরে থাকতাম। কোথাও পড়েছি, এখানে চিনা পর্যটক হিউয়েন সাং এসেছিলেন। তাঁর ভ্রমণকাহিনি নিয়ে একটি ছবি তৈরি করা হচ্ছিল। আমি চিনা দূতাবাসে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলাম, তাঁদের ছবিতে যেন আমাদের এই গ্রামকে ভাল করে দেখানো হয়।’’ পরে ২০১৪ সালে মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ফোন করে তাঁর কাছে গুজরাতের ওই গ্রাম ঘুরে দেখার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন।
জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা
গোধরাকাণ্ডের পরবর্তী সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘২০০২ সালে গুজরাতে ভোট ছিল। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। মনে আছে, আমি সবাইকে বলে রেখেছিলাম, বেলা ১২টার আগে আমাকে ভোটের ফলাফলের কোনও তথ্য না-দিতে। পরে জানতে পারলাম, দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে আমি এগিয়ে আছি। আমার ভিতরে তখন অনেক কিছু হচ্ছিল। কিন্তু সে সবে আমি পাত্তা দিইনি। নিজেকে সংযত রেখেছিলাম।’’
সাধারণ ছাত্র
স্কুলে সাধারণ ছাত্র ছিলেন মোদী। বলেন, ‘‘আমি তেমন চোখে পড়ার মতো কিছু করিনি স্কুলে। ভেলজিভাই চৌধরি নামের আমাদের এক শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ দিতেন। আমার বাবাকে বলেওছিলেন, আমার প্রতিভার কথা। পরীক্ষায় কখনও মনোযোগ দিতাম না আমি।’’
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটিই তাঁর প্রথম পডকাস্ট সাক্ষাৎকার, মেনে নিয়েছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘জানি না, সাধারণ মানুষ এই সাক্ষাৎকারকে কেমন ভাবে নেবেন। আমি আগে কখনও এমন কিছু করিনি।’’ ইতিমধ্যে দু’ঘণ্টার ভিডিয়োটি সাড়া ফেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জীবনের অজানা গল্প জানতে অনেকেই সেই সাক্ষাৎকার শুনে ফেলেছেন।