ঋত্বিক চক্রবর্তী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে টলিপাড়ার তারকারা অনেকেই প্রকাশ্যে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। কেউ আবার সমাজমাধ্যমে নিজের মতো করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ঋত্বিক চক্রবর্তী। ১৮ অগস্ট খান্না মোড় থেকে আরজি করের উদ্দেশে শিল্পীদের মিছিলেও তাঁকে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত আরজি কর প্রসঙ্গে তিনি সাবধানী। গণমাধ্যমের কাছেও তিনি অধরা।
৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে মৃতা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তার পর থেকেই রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের স্বর চড়তে শুরু করে। কিন্তু সমাজমাধ্যমে বাইরে এখনও ঋত্বিক কেন ‘চুপ’, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দেখে নেওয়া যেতে পারে, আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সমাজমাধ্যমে ঠিক কী কী লিখেছেন ঋত্বিক।
১১ অগস্ট ফেসবুকে আরজি করের ঘটনা প্রসঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে ঋত্বিক লেখেন, ‘‘আমরা সবাই বিচার চাই।’’ ১৪ অগস্ট রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মহিলারা ‘রাত দখল’ কর্মসূচি আহ্বান করেন। ঋত্বিক সেই সংক্রান্ত একাধিক পোস্ট সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নেন। বিবরণীতে লেখেন, ‘‘আজ সারা দেশে।’’ ১৫ অগস্ট ঋত্বিক তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘‘ভয়-মুক্ত জনগণ দেখলে শাসকরা ভয় পায় কেন?’’ তাঁর উদ্দেশ্য স্পষ্ট। কিন্তু তার পর থেকেই অভিনেতা কেন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বেশ কিছু নেটাগরিককে অভিনেতা উত্তরও দেন। একজনের উদ্দেশে লেখেন, ‘‘আপনি ফেসবুকে কালোয়াতি করছেন আপাতত? রাস্তায় থাকুন। আমার প্রোফাইলে আপনার বিপ্লবী সময় নষ্ট করবেন না।’’
১৪ অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতাল ভাঙচুরে অভিযুক্তদের শনাক্ত করার জন্য নেটাগরিকদের কাছে আবেদন করে কলকাতা পুলিশের তরফে একটি পোস্ট করা হয়। ১৬ অগস্ট সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ঋত্বিক সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘আমাদেরই খুঁজতে বলছেন? তখন আপনারা কী করবেন? ও বাড়ির পুজোতে খিচুড়ি পরিবেশন করতে হাতা মাজবেন?’’
সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ করতে ঋত্বিক প্রায়শই পুতুলের সাহায্য নেন। সেই ভিডিয়োগুলি অনুরাগীদের মধ্যে চর্চিত। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে কোনও একটি মিছিল নিয়ে নিজের প্রতিবাদ জানাতে ১৭ অগস্ট ঋত্বিক লেখেন, ‘‘একটা হ্যান্ড পাপেট নিয়ে মাঝে-মাঝে ভিডিও করি, নাম দিই ‘হাতের বাইরে হাতের পুতুল’। কাল একটা মিছিলে দেখলাম, ‘পায়ে পায়ে হাতের পুতুল’।’’ খান্না মোড় থেকে আরজি কর পর্যন্ত শিল্পীদের মিছিলের আহ্বান এবং দাবি সম্বলিত পোস্টারগুলিও অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন ঋত্বিক।
১৮ অগস্ট থেকে আরজি কর প্রসঙ্গে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। তখনও ঋত্বিক নাম না করে সৌরভকে কটাক্ষ করতে পিছপা হননি। তিনি লেখেন, ‘‘শুনলাম, সেই চা-দোকানের অদৃশ্য দার্শনিক লোকটার গলা বলছে— ‘আরে নামটাই তো এমন! নামে গৌরবের সঙ্গে অন্ত্যমিল ছিল বলে সবাই বাঙালির গৌরব বলে। জানিস না, বাঙালি ছড়া কাটতে ভালোবাসে?’’’ আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যে পরবর্তী উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যুবভারতীর বাইরে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান সমর্থকদের প্রতিবাদ মিছিল এবং তাঁদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ। চুপ করে থাকেননি ঋত্বিক। তিন ক্লাবের সমর্থকদের একাধিক ছবি ভাগ করে অভিনেতা লেখেন, ‘‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল।’’
এর পর ‘রাত দখল’ কর্মসূচি এবং আরজি কর প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নমন্ত্রী তথা দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহের একাধিক মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দেখা দেয়। তখনও নীরব থাকেননি ঋত্বিক। সমাজমাধ্যমে অভিনেতার কটাক্ষ, ‘‘তুই কোথাকার অপদার্থ উদ? তোকে তো অর্ধেক বললেই পুরোটা বলা হয়ে যাচ্ছে! যাক গে তুই গু হ! তুই নাকি আঙুল তুলে প্রশ্ন করলে আঙুল মটকে দিবি?’’
সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তের শুনানির সময়ে রাজ্যের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বলের ভূমিকা এবং আদালতে আচরণ নিয়েও চর্চা হয়েছে। ঋত্বিক তাঁর প্রতিবাদে লেখেন, ‘‘সব কপিল দেব ও নিখাঞ্জ হয় না।’’ এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে টলিপাড়ার অন্যান্য তারকাদের মতোই একাধিক প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন ঋত্বিক।
মঙ্গলবার সকালে রাজ্যের ছাত্র সমাজের তরফে নবান্ন অভিযানের আগেও ফেসবুকে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেন ঋত্বিক। সেই পোস্ট বলছে, ‘‘যখন সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে খেলা হবে বলে খেলো করা হচ্ছিল, তুমি করতালি দিয়েছিলে তো? বেশ! এ বার একটু ছেলেখেলা দেখে নাও।’’ মঙ্গলবারের নব্বান্ন অভিযান যে আদতে বিজেপির মদতে হয়েছে, তা নিয়ে চর্চা চলছে। প্রতিবাদে যে ‘ছাত্র’দের দেখা গিয়েছে, তাদের প্রকৃত পরিচয় নিয়েও সমাজমাধ্যমে কটাক্ষ চোখে পড়েছে। তাই ফেসবুকে ঋত্বিকের প্রশ্ন, ‘‘এ কেমন ছাত্র দেখালে তুমি?’’
উল্লেখ্য, ঋত্বিকের সাম্প্রতিক একটি পোস্টে অন্য ছবি ধরা পড়েছে। সেই পোস্টারে লেখা, ‘‘চুপ করে থেকো না, ঢেউ এসে লাগে চোখে। এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে কিন্তু দেওয়াল বলবে লোকে।’’ ঋত্বিক বরাবরই প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তিনি যে নিজের মতো করে প্রতিবাদ করছেন, তা স্পষ্ট। ঋত্বিককে যাঁরা ট্রোল করছেন, তাঁদের বিপক্ষে অনুরাগীদের যুক্তি, প্রতিবাদ যে কোনও ভাবেই করা যায়। ঋত্বিক সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন। নেটাগরিকদের অনেকেরই প্রশ্ন, প্রতিবাদ করতে প্রতি দিন মিছিলে হাঁটা বা প্রকাশ্যে বক্তৃতা করার প্রয়োজন আছে কি?