বনগাঁ পৌরসভা। —ফাইল চিত্র।
চোরাপথে দালাল ধরে এ দেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তিন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করল বনগাঁ থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার কলমবাগান থেকে তাদের ধরা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম হাসান মিঞা, মহম্মদ সোহাগ মিঞা এবং ইয়াসিন সরকার। তাদের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণবেড়িয়া ও গাজিপুরে। বয়স, ২২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। ধৃতদের শুক্রবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের চার দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্য একটি ঘটনায়, অবৈধ ভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে ভিন্ রাজ্যে গিয়ে দীর্ঘ দিন থাকার পরে দালালের সঙ্গে বাংলাদেশে যাওয়ার পথে ধরা পড়েছে এক দম্পতি। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে স্বরূপনগরের সগুনা সীমান্ত এলাকায়। পুলিশ জানায়, ধৃত দম্পত্তির নাম জুয়েল মিঞা এবং সোনিয়া পরভিন। তাদের বাড়ি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায়। বিথারি এলাকা থেকে এক দালালকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে দালাল ধরে চোরাপথে এ দেশে এসে বনগাঁ এলাকায় গা-ঢাকা দিয়েছিল সকলে। তাদের জেরা করে পুলিশ দুই ভারতীয় দালালের খোঁজ পেয়েছে। যারা তাদের এ দেশে এনেছিল। পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। বনগাঁ মহকুমা আদালতের বিশেষ সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘ধৃত বাংলাদেশিদের কথাবার্তা পুলিশের সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে। যে কারণে তাদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।’’
এরই মধ্যে বনগাঁ মহকুমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি দিয়েছেন বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। চিঠিতে গোপাল জানিয়েছেন, বনগাঁ শহর সংলগ্ন ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটছে। মহকুমায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত আছে ৯২ কিলোমিটার। অথচ, এই বিস্তীর্ণ এলাকায় পাহারা দেওয়ার মতো যথেষ্ট বিএসএফ জওয়ান এখানে মোতায়েন নেই। গোপাল বলেন, ‘‘সীমান্তে সর্বত্র সিসি ক্যামেরা নেই। যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। মোতায়েন নেই যথেষ্ট পরিমাণে বিএসএফ জওয়ান। সে কারণেই অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অশান্ত পরিস্থিতি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার এই এলাকায় বিএসএফের সংখ্যা বাড়ায়নি।’’ চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের এক শ্রেণির নাগরিক ‘মাল্টি পারপাস ভিসা’ নিয়ে নিয়মিত বনগাঁ শহরে আসা-যাওয়া করছেন এবং শহরের বিভিন্ন হোটেলে থাকছেন। তাঁদের উপরে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। অপরিচিতরা প্রায়ই সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছে। বাড়ির মালিকেরা প্রশাসনকে এই তথ্য জানাচ্ছেন না। এই তথ্য নিয়মিত প্রশাসনকে সংগ্রহ করতে হবে বলেও চিঠিতে দাবি জানিয়েছেন গোপাল।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস অবশ্য মণ্ডল বলেন, ‘‘সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এই অনুপ্রবেশ ঘটছে। এই রাজ্যের সরকার নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে কাঁটাতারের বেড়া দিতে সহযোগিতা করছে না। জমি অধিগ্রহণ করে বিএসএফকে দিচ্ছে না।’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতারা। বহু জায়গায় জমি অধিগ্রহণ করে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তাঁরা জানান, ‘কেন্দ্রের ব্যর্থতা’ এবং ‘সদিচ্ছার অভাবে’ বহু এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়নি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ ব্লকে সর্বত্র কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য প্রায় ২৪ একর জমি কেনার প্রয়োজন। গত ডিসেম্বরপর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ একর জমি কেনা হয়েছে।