গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বেশ কয়েক বছর আগে পরিচালক অপর্ণা সেন তাঁর ছবি ‘পারমিতার একদিন’-এ অটিজ়মের মতো একটি বিষয় নিয়ে আসেন। তখন শহুরে বাঙালির অনেকে যদিও অবগত ছিলেন এটি নিয়ে, কিন্তু একটি বড় অংশ অটিজ়ম নামটি তখনও অবধি শোনেননি। তার পর বহু বছর পেরিয়ে গিয়েছে।
২ এপ্রিল ‘বিশ্ব অটিজ়ম দিবস’। সংবাদমাধ্যম হোক কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান— নানা জায়গাতেই এই দিনটি পালন করা হয়। সরকারি, বেসরকারি ক্ষেত্রে আয়োজিত হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কর্মসূচি। সিনেমা বা টেলিভিশনের ধারাবাহিকে, এই অটিজ়ম নিয়ে চর্চা কমবেশি সর্বত্র। এই অসুখটি নিয়ে সমাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে আগের তুলনায় অনেকটাই, তবে সবাই পুরোপুরি সচেতন হয়ে উঠেছেন, এমন নয়। সম্প্রতি এমনই এক অটিস্টিক কিশোরের বয়ঃসন্ধির গল্প নিয়ে ছবি বানিয়ে ফেলেছেন পরিচালক মিতুল দত্ত।
ছবির নাম ‘বাটন হোল’। ছবিটি এর মধ্যেই গোয়ায় একটি চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে। শোনা যায়, ভালমতো সাড়াও পেয়েছেন পরিচালক। এ বার কলকাতায় নিজের উদ্যোগ ছবিটির ‘স্ক্রিনিংয়ের’ ব্যবস্থা করেছেন মিতুল। বুধবার তপন থিয়েটারে সন্ধে সাড়ে ৬টায় দেখানো হবে এই ছবি। ছবির বিষয়ে অটিজ়মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হস্তমৈথুনও। হঠাৎ এমন বিষয়ে নিয়ে ছবি করার ভাবনাচিন্তা এল কোথা থেকে মিতুলের?
উত্তরে যা বললেন পরিচালক তার সংক্ষেপ করলে দাঁড়ায়, একটি ছবি দেখে ভুলে যাওয়া নয়, বরং ছবিটি অভিঘাত সৃষ্টি করুক সমাজে, এটাই উদ্দেশ্য তাঁর। ছবির স্ক্রিনিংয়ের পর একটি বিশেষ ‘সেশনের’ বন্দোবস্ত করেছেন তিনি। তবে তিনি জানালেন, এমন একটি বিষয় নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা তাঁর হয়েছে পরিবারের একান্ত কাছের এক কিশোরকে দেখে। সে বছর ১৭ বয়সের একটি ছেলে, তবে মানসিক ভাবে এখন ৫ বছরের শিশু। তাকে বড় করে তোলার এই সফরের নানা অভি়জ্ঞতা থেকেই জন্ম ‘বাটন হোল’-এর।
পরিচালক মিতুল আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমার পরিবারে রয়েছে ১৭ বছরের একটি ছেলে। ও আমার বোনের সন্তান। আমার বোন প্রয়াত। বোনের প্রয়াণের পর ও আমার এবং আমার মায়ের কাছে থাকে। ওকে বড় করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি আমি। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেও সে শিশু। নিজের যৌনাঙ্গকে সে ভাবে খেলনা। এক সময় আমি ও আমার স্বামী মিলে, ওকে হস্তমৈথুনের বিষয়টির সঙ্গে অবগত করাই। সেখান থেকেই আমার ছবির চরিত্র বুকুনের সৃষ্টি। সে প্যান্টের বোতাম খুলতে পারে না। তখন স্কুলের সহপাঠী তাকে সাহায্য করে। শেষে ওই বোতামই কী ভাবে একটি কিশোর ছেলেকে আত্ম-অনুসন্ধানে সাহায্য করবে, এই ছবিতে সেটাই দেখানোর চেষ্টা করেছি।’’বুকুনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর মায়ের ভূমিকায় আছেন সঞ্জিতা।
অটি়জ়ম নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবু সকলে এখনও সচেতন নয়। যাঁরা সচেতন নন, সেই সব বাবা-মায়েদের কাছেই বিশেষ বার্তা তুলে ধরতে চান পরিচালক। অটিজ়মকে যাঁরা ‘পাগলামি’ বলে আখ্যা দেন এই ছবি তাঁদের ভুল ভাঙাবে বলেই আশাবাদী তিনি।