অঞ্জন দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
মৃণাল সেন তাঁর কাছে গুরুস্থানীয়। প্রয়াত পরিচালককে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে অঞ্জন দত্ত তৈরি করেছেন ‘চালচিত্র এখন’। এই ছবির মাধ্যমে তিনি আবার ফিরে এসেছেন বলে বিশ্বাস করেন অঞ্জন। আত্মসমালোচনা যতখানি করেন, ঠিক ততটাই সমালোচনাকেও গুরুত্ব দেন। এই বয়সেও একাধিক শিল্পমাধ্যম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চান তিনি। সম্প্রতি এক সকালে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় তাঁর ‘মৃণালদা’কে ছাড়াও নিজের ‘কেরিয়ার’কে ফিরে দেখলেন অঞ্জন। জানালেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও।
প্রশ্ন: বিগত এক বছর ‘চালচিত্র এখন’ নিয়ে আপনার সফর এ বার শেষ হতে চলেছে। ছবি মুক্তির আগে মনের অবস্থা কেমন?
অঞ্জন: আমি আর নীল (দত্ত) নিজেদের টাকায় ছবিটা করেছি। তার উপর মৃণাল সেনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে তৈরি ছবি। পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল। তাই খুব আনন্দের সঙ্গেই কাজটা আমরা শেষ করেছি। তার পর কলকাতা এবং ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে জোর এসেছে। ছবি নিয়ে আমি এখন ‘কনফিডেন্ট’।
প্রশ্ন: শিষ্য হয়ে ‘গুরু’র চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে মনের মধ্যে কোনও ভয় কাজ করেনি?
অঞ্জন: আর কোনও বিকল্প পথ ছিল না তো! চিত্রনাট্য লেখার সময়েই সিদ্ধান্ত নিই যে, মৃণালদার চরিত্রে আমিই অভিনয় করব। কারণ অভিনেতা হিসেবে আমি ওঁকে যতটা চিনেছি বা বুঝতে পারব, যে এনার্জি প্রয়োজন, সেটা অন্য কোনও অভিনেতা বুঝতে পারবেন না। অন্য কাউকে ততটা নির্দেশনা দেওয়াও মুশকিল হত। ধরা যাক, এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার সময়ে সেই অভিনেতা হোঁচট খেলেন না। তা হলে তাঁকে বার বার আমার পক্ষে বলা মুশকিল। কারণ আমি তো জানি যে, মৃণালবাবু এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার সময়ে হোঁচট খেতেন। আমার ভয় করেনি। বরং ছবিতে আমার কম বয়সের চরিত্রাভিনেতা (শাওন চক্রবর্তী) খুঁজে পেতে আমায় বেগ পেতে হয়েছিল।
প্রশ্ন: মৃণাল সেনের সঙ্গে আপনার প্রথম আলাপ মনে আছে?
অঞ্জন: (হেসে) খুব মনে আছে। ১৯৭৮ সাল। তখন আমার ২২-২৩ বছর বয়স। সাংবাদিক হিসেবে ওঁর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম। তার পর একটা নাটকের জন্য যোগাযোগ হয়। তার পর উনি আমাকে ফোন করে ‘চালচিত্র’ ছবিটার প্রস্তাব দেন। ওঁর সঙ্গে প্রথম আলাপ থেকে ছবিটার শুটিং শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়টা নিয়েই ‘চালচিত্র এখন’।
প্রশ্ন: ‘চালচিত্র’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আপনি সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন। উৎসবের কোনও স্মৃতি মনে পড়ছে?
অঞ্জন: পুরো উৎসবে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন মৃণালবাবু। উনি পরে উৎসবে যোগ দেন। আমার জীবনে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে উপস্থিতি। মৃণালদাকে দেখছি বিশ্বের তাবড় সব পরিচালকদের নাম ধরে সম্বোধন করছেন। ওঁকেও যেন নতুন করে চিনতে পারলাম। আমি সমুদ্রসৈকতে দিন কাটাচ্ছি, ভেনিস শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। উৎসবে রবার্ট ডি’নিরোর পিছনে দৌড়চ্ছি। একটাও ছবি দেখছি না। (হাসতে হাসতে) মৃণালবাবুও শেষে আমাকে বললেন, ‘‘কী করছ তুমি? একটা-দুটো ছবি তো দেখো!’’
প্রশ্ন: কিন্তু তার পর যখন পুরস্কার পেলেন, সেই দিন মৃণাল সেন আপনাকে কী বলেছিলেন?
অঞ্জন: মৃণালদাই আমাকে প্রথম খবরটা দেন। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ উৎসবে রবার্ট ডি’নিরো এবং রবার্ট ডুভালের মতো অভিনেতা পুরস্কৃত হচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে আমি! আমার মনে হয়, আমার থেকেও মৃণালদা অনেক বেশি খুশি হয়েছিলেন এই খবরটা পেয়ে। খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। কারণ এখন বুঝতে পারি, ‘আকালের সন্ধানে’র পর আমার মতো নতুন এক জন অভিনেতা নির্বাচন করে উনি খুব বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন। আমি বোকার মতো জি়জ্ঞাসা করেছিলাম যে, ছবিটা কোনও পুরস্কার পাবে না? শুনে মৃণালদা হেসে বলেছিলেন, ‘‘পরের ছবি পুরস্কার পাবে। এ বারে তুমি পেয়েছ, আনন্দ করো।’’ তবে একটা আক্ষেপও রয়েছে।
প্রশ্ন: কী রকম?
অঞ্জন: কলকাতা ফিরে আসার পর ছবির প্রযোজক দেউলিয়া হয়ে যান। ফলে ছবিটা আর মুক্তি পায়নি। তবে নেগেটিভটা কিনে নিয়েছিল দূরদর্শন। ফলে অনেকেই ছবিটা দেখেছিলেন। কয়েক বছর পর ফ্রান্সের লা রোশেল চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটাকে আলাদা করে উদ্যাপন করা হয়।
প্রশ্ন: ‘চালচিত্র এখন’ ছবিতে আপনাকে ওঁর চরিত্রে দেখলে মৃণাল সেন কী বলতেন বলে মনে হচ্ছে?
অঞ্জন: (হেসে) জানি না। (একটু ভেবে) প্রথমত, হয়তো বুঝতেন যে অঞ্জন প্রথাগত নিয়ম ভেঙে একটা ছবি তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ত, হয়তো আমার স্ত্রী বা ওঁর স্ত্রীকে গিয়ে বলতেন, ‘‘অঞ্জন আর নীল এত টাকা খরচ করে ফেলল। টাকা উঠবে তো? আমার ছবি তো কেউ দেখেনি, অঞ্জনের ছবিটা মানুষ দেখবে তো?’’
প্রশ্ন: গত বছর ‘পালান’ ছবিতে অভিনয় করলেন। এ বার এই ছবি। সৃজিত মুখোপাধ্যায় ‘পদাতিক’ তৈরি করেছেন। মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন দেখে আপনি কতটা খুশি?
অঞ্জন: আমার ভাল লেগেছে। তিনটে ছবি তো হল। সারা দেশে একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে ওঁর ছবি দেখানো হয়েছে। একাধিক আলোচনাসভা হয়েছে। বইমেলায় তো দেখলাম মৃণাল সেনের উপর প্রচুর বই প্রকাশিত হয়েছে। কুণাল (মৃণাল সেনের পুত্র কুণাল সেন) তো শুরু থেকেই উদ্যোগী। মৃণাল সেনের ছবি যে খুব বেশি চলেছে, তা নয়। কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গেই সমান গুরুত্বপূর্ণ নাম হিসেবে তিনি পরিচিত। আসলে মৃণালদার উপর কোনও কিছু করতে হলে তো কোনও সংগঠনের কাছ থেকে অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তাই বিষয়টা অনেক বেশি সহজ।
প্রশ্ন: সত্যজিৎ রায় এবং মৃণাল সেনকে নিয়ে বাঙালির যে চিরকালীন চর্চা বা দু’জনকে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রমাণের যে চেষ্টা সর্বদা হয়ে চলেছে, সেটাকে আপনি কী ভাবে দেখেন?
অঞ্জন: এটা দারুণ একটা দিক। দু’জনে দুই ধারার ছবি করেছেন। দু’জনেই আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন। দু’জনেই ভাল বন্ধু, আবার মতানৈক্যও হয়েছে। এটা অনেকটা সেই মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল বা উত্তমকুমার বনাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো। রবীন্দ্রনাথ বনাম শরৎচন্দ্র বা সুমন বনাম নচিকেতার মতো। পার্থক্য থাকলেও একে-অপরের সঙ্গে সহাবস্থান করেন। এই স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতাটা সব জায়গাতেই থাকা উচিত।
প্রশ্ন: ‘চালচিত্র এখন’ একই সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহ এবং ওটিটিতে মুক্তি পাচ্ছে। কারণ কী?
অঞ্জন: দেখুন, বিগত কয়েক বছরে আমার দর্শকের একটা বড় অংশ কলকাতার বাইরে চলে গিয়েছেন। গ্লোবাল বাঙালির কাছে পৌঁছতে গেলে ওটিটিই সেরা মাধ্যম। কোন মাধ্যমে দর্শক আমার ছবি দেখবেন, সেটা তাঁদের সিদ্ধান্ত। আমাকে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যাঁরা বাংলায় রয়েছেন, তাঁরা প্রেক্ষাগৃহে দেখবেন। বাকিরা ওটিটিতে দেখবেন। সমস্যা তো নেই।
প্রশ্ন: সাংবাদিকতা, নাটক, অভিনয়, গান, লেখা— এতগুলো জিনিসের মধ্যে এই বয়সে এসে এখন কোন কাজটা করতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন?
অঞ্জন: আমার সবটাই ভাল লেগেছে। অভিনয়, নাটক বা পরিচালনা আমি জেনে, বুঝে, শিখে তার পর করতে এসেছি। গান কিন্তু শিখিনি। গানের পিছনে সময়ও দিইনি। অথচ সেই গানই আমাকে কত কিছু দিয়েছে। গান গেয়ে আমি কত দেনা শোধ করেছি। আমি সব কিছুই করতে চাই। কোনও দিন শুধু কোনও একটা কিছু করব বলে নিজেকে কখনও আটকে রাখিনি। মনে হয়েছিল, এ রকম একটা ‘কনফিউজ়ড’ বাজারে শুধুমাত্র একটা জিনিস করতে থাকলে সব সময়েই মনে হয়েছে অনেক বেশি আপস করতে হবে। (জোর গলায়) আমি এই বয়সে এসেও সব কিছুই সমান তালে করে যেতে চাই। যেমন, ‘চালচিত্র এখন’ লেখার পর আমি চারটে চিত্রনাট্য লিখেছি। কিন্তু একটা নিয়েও ছবি করব না। কারণ আমার সেগুলোকে ‘চালচিত্র এখন’-এর মতো ভাল লাগেনি। তাই অন্য কিছু করব।
প্রশ্ন: আপনি নিজের ভাল না লাগার কথা বললেন। টলিপাড়ায় তো এখন অনেকেই সমালোচনা গ্রহণই করতে পারেন না। কী বলবেন?
অঞ্জন: এখন আত্মসমালোচনা সত্যিই কমে গিয়েছে। শিল্পী হিসেবে আরও উন্নত হওয়ার জন্য সমালোচনাকে ইতিবাচক দিক থেকেই গ্রহণ করা উচিত। সমালোচনা যত বেশি হবে, যত খোলা মনে করা হবে, ততই আমরা আরও আধুনিক হব।
প্রশ্ন: কিন্তু এখনকার শিল্পীরা সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না কেন?
অঞ্জন: দেখুন, এর জন্য দেশের রাজনীতি দায়ী! যাঁরা সমালোচনা নিতে পারছেন না, তাঁরা রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিকাঠামোর শিকার। রাজনীতিতে কেউ নেতিবাচক মন্তব্য সহ্য করবেন না। কিন্তু শিল্প তো আলাদা। এখন অসংখ্য শিল্পী রাজনীতিতে চলে এসেছেন। তাই মনে হয়, রাজনীতি তাঁদের শিল্পের ক্ষেত্রেও হয়তো ফাঁদে ফেলে দিচ্ছে। শিল্পকেও তাঁরা রাজনীতির মাপকাঠিতে বিচার করছেন। তাই সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না। শুধুই সাফল্য উদ্যাপনের চেষ্টা। বাণিজ্যিক ব্যর্থতাকে কেউ উল্লেখ করেন না। আমার ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’, ‘আমি আসবো ফিরে’ বা ‘ফাইনালি ভালবাসা’ ছবিগুলো বক্স অফিসে চলেনি। তার মানে কি ছবিগুলো খারাপ? ‘বেলা বোস’ শ্রোতারা বেশি শোনেন বলে, সেটা কি ‘দুটো মানুষ’-এর থেকে ভাল গান? এই বোধটা হারিয়ে গেলে তো আমি আর কোনও দিন ‘আমি বৃষ্টি দেখেছি’ লিখতে পারব না!
প্রশ্ন: তার মানে সমালোচনার পাশাপাশি নিজের কাজটা চালিয়ে যেতে হবে?
অঞ্জন: অবশ্যই। বব ডিলানের বয়স এখন ৮২ বছর। চারপাশে কত সমালোচনা। কিন্তু তিনি নিজের কাজটা ঠিক করে চলেছেন। বিদেশে কত বয়স্ক অভিনেতা রয়েছেন। কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু এখনও নিজের মতো কাজ করে চলেছেন। তাঁরা আমার অনুপ্রেরণা। সে দিন এই একই বিষয়ে মৈনাক ভৌমিকের (পরিচালক) সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বললাম। ওর মতে, সমালোচনা বা আমিই সেরা, এটা জাহির করা— এই পুরো বিষয়টাই নিরাপত্তাহীনতার বোধ থেকে জন্ম নিচ্ছে।
প্রশ্ন: আর যাঁরা বলেন ‘ম্যাডলি বাঙালি’ বা ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’-র অঞ্জন হারিয়ে গিয়েছেন… !
অঞ্জন: ‘বো ব্যারাকস্ ফরএভার’ থেকে ‘রঞ্জনা...’। এর পর বেশ কিছু বাজে ছবি করেছিলাম। আমার করা ব্যোমকেশ তো খুব খারাপ! ওই পাঁচ-ছ’টা ব্যোমকেশ আমাকে একদম শেষ করে দিয়েছে! এমনকি ‘গণেশ টকিজ়’ও খুব বাজে। মানুষও সমালোচনা করেছিলেন। আমিও বলার চেষ্টা করেছিলাম, যে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: তা হলে কি এ বার প্রত্যাবর্তন?
অঞ্জন: সেটা মনে হয় ‘আমি আসব ফিরে’র মাধ্যমে। তার পরেও কাজগুলো হয়তো খারাপ হয়নি। কিন্তু আরও ভাল করতে পারতাম। দেখুন, ‘মি টু’-র প্রেক্ষাপটে আমার একটা মজার ছবি তৈরির ইচ্ছে রয়েছে। তার পরেও মানুষ বলবেন, ‘‘দেখেছ, ঠিক ‘ম্যাডলি বাঙালি’ হল না!’’ আবার কয়েক জন ভাল বলবেন। আমি কাউকেই দোষ দিই না। আমি জানি, দর্শক আমার কাছে এক জন নতুন শাশ্বত (চট্টোপাধ্যায়), পরমব্রত (চট্টোপাধ্যায়) বা রণদীপের (বসু) মতো কাউকে খুঁজে বার করার দাবি করেন। ‘রিভলবার রহস্য’ প্রায় ১০০ দিন শুধু নন্দনে চলেছে। অন্য কোথাও চলেনি। পরে দর্শক ওটিটিতে ছবিটা দেখেছেন। অঞ্জন দত্ত যে বদলে গিয়েছে— এই ধরনের সমালোচনাকে আমি আর নেতিবাচক দিক থেকে দেখি না। বরং বিশ্বাস করি ‘চালচিত্র এখন’-এর মাধ্যমে আমি ফিরে এসেছি।
প্রশ্ন: মৃণাল সেন এবং আপনার কাজের মধ্যে বার বার কলকাতা ঘুরেফিরে এসেছে। বদলে যাওয়া কলকাতাকে দেখে আপনার কী মনে হয়?
অঞ্জন: সব কিছুই বদলে যায়। আমার আক্ষেপও আছে। সেটা আমার ছবিতেও বলেছি। কিন্তু তা-ও মনে হয়, কলকাতার ভাষা-সংস্কৃতিগত বৈচিত্র এবং মহানাগরিক বৈশিষ্ট্য বদলানো সম্ভব নয়। এটা কলকাতার শিকড়ের এতটাই গভীরে রয়েছে যে, সেটা কোনও রাজনৈতিক দল ধ্বংস করতে পারবে না! কিন্তু তার পরেও কিছু-কিছু রাস্তার নাম হারিয়ে যাচ্ছে, বদলে ফেলা হচ্ছে— এটা ভাল নয়।
প্রশ্ন: শুনেছি সুধীর মিশ্রের নতুন ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করছেন।
অঞ্জন: হিন্দি কাজ করতে আমার ভয় করে। কিন্তু সুধীর আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু। কিছুতেই শুনল না। জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপটে ওয়েব সিরিজ় (‘সামার অফ ’৭৭— চিলড্রেন অফ ফ্রিডম’)। আমাকে সারা দেশ জুড়ে শুটিং করতে হবে (হাসি)। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।
প্রশ্ন: আর আপনার নতুন কাজ?
অঞ্জন: পরমব্রতের ছবিটার (‘এই রাত তোমার আমার’) শুটিং শেষ। এই বছর আর ছবি পরিচালনা করব না। ইচ্ছে আছে ‘কিং লিয়র’ নাটকটা বড় আকারে মঞ্চে উপস্থাপন করব। আমি নিজেই নামভূমিকায় অভিনয় করব। দেখা যাক, দর্শক কী বলেন।
প্রশ্ন: কিন্তু এখন তো অনেকেই বছরে তিনটে ছবি পরিচালনা করছেন।
অঞ্জন: যাঁরা করেন, তাঁদের প্রতিভা আছে। কী ভাবে করেন, সেটা আমি জানি না। আমি তাঁদের শ্রদ্ধা করি। আমার ইচ্ছে করে না।