অরুণিমা ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
সুঅভিনেত্রী হিসেবে তিনি পরিচিত। কাজ করেন বেছে বেছে। সম্প্রতি ‘কীর্তন ২’য়ের শুটিং শুরু করেছেন অরুণিমা ঘোষ। অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর সফরকে কী ভাবে দেখছেন তিনি? অভিনয় এবং ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও রাজনীতি বা ব্যক্তিগত জীবন— আনন্দবাজার অনলাইনের সামনে একাধিক বিষয়ে কথা বললেন অরুণিমা।
গত বছর ‘কীর্তন’ ছবিতে দর্শক অরুণিমাকে দেখেছেন। বলছিলেন, ‘‘ওখানে এক জন সাধারণ গৃহবধূর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। তার পরেও দর্শক যে ভাবে প্রশংসা করেছেন, তা দেখে আমি মুগ্ধ।’’
ঘটনা হল, কেরিয়ারের শুরু থেকেই গতে বাঁধা কাজ করতে চাইতেন না অরুণিমা। তাঁর মতে, এত দিন যে ধরনের চরিত্রের অপেক্ষায় থাকতেন তিনি, গত তিন-চার বছরে ধীরে ধীরে তা পূরণ হতে শুরু করেছে। বললেন, ‘‘বুম্বাদার (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) থেকে শুনেছি যে, ম্যাচিওরড চরিত্রের জন্য অভিনেতাকে অপেক্ষা করতে হয়। আমি হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন সেই পর্যায়ে পৌঁছেছি। তাই মনের মতো চরিত্রগুলো আসতে শুরু করেছে।’’
গত কয়েক বছরে টলিপাড়ার একটি বিশেষ প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গেই অরুণিমার কাজের আধিক্য। তা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে নানা রটনাও রয়েছে। অরুণিমা অবশ্য সে সবকে খুব একটা পাত্তা দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘অবাক কাণ্ড! অনেকের তুলনায় আমি কিন্তু কম কাজ করি। চরিত্রটিকে তো আগে আমার নিজের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। সেখানে কোনও একটি সংস্থা পর পর ভাল কাজের প্রস্তাব দিলে না করার তো কোনও কারণ নেই।’’
কথাপ্রসঙ্গেই চরিত্র নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গ উঠে এল। অরুণিমা বিশ্বাস করেন, নানা ধরনের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন এবং তাঁকে মানিয়েও যায়। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘‘তাই ভাল বা কঠিন চরিত্রের আশা তো করতেই পারি। একই জিনিস বার বার করতে পছন্দ করি না।’’
ইন্ডাস্ট্রিতে দু’দশক সম্পূর্ণ করেছেন অরুণিমা। এক সময়ে বাংলা বাণিজ্যিক মশলা ছবিতেও স্বল্প পরিসরে অভিনয় করেছিলেন অরুণিমা। তবে অভিনেত্রী জানালেন, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত থেকেই তিনি ধীরে ধীরে অন্য ধারার ছবিতে সরে আসেন। একটা দীর্ঘ সময় ‘না’ বলে গিয়েছেন নানা কাজে। ফলে তাঁর প্রতি যে নির্মাতাদের নেতিবাচক ধারণা জন্মে থাকতে পারে, এ-ও অস্বীকার করেন না তিনি। বললেন, ‘‘কেউ ভাবতেই পারেন যে আমাকে কিছু চরিত্রের কথা বললেই ‘না’ বলি। ফলে তাঁর পরের ছবিতেও হয়তো আমাকে আর বলেনই না। তাই হয়তো কাজের প্রস্তাব কম পাই।’’
ইন্ডাস্ট্রির একাংশের বিশ্বাস, এখন সমাজমাধ্যমে না থাকলে নাকি কাজ পাওয়া যায় না। অরুণিমা আবার কাজের বাইরে সমাজমাধ্যমে নেই। হেসে বললেন, ‘‘মাঝে আমার ম্যানেজার বলত যে, প্রতি দিন রিল বানাতেই হবে! পারিনি। আমার একটাও রিল নেই।’’
একটি ছবির প্রচারের জন্যই মাঝে ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছিল তাঁকে। তবে নিয়ম করে ইন্টারনেটে দেশ-বিদেশের খোঁজখবর রাখেন তিনি। অরুণিমা বললেন, ‘‘কাউকে অসম্মান না করেই বলছি, আমি যদি অভিনেত্রী না হতাম, তা হলে সমাজমাধ্যমেই থাকতাম না। কারণ আমি অত্যন্ত ‘প্রাইভেট পার্সন’।’’ সমাজমাধ্যমকে যে অন্য রকম ভাবেও ব্যবহার করা যায়, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে অরুণিমা লিওনার্দো ডি’ক্যাপ্রিও এবং অ্যাঞ্জেলিনা জোলির নাম উল্লেখ করলেন।
অভিনেত্রীর মতে, অভিনয় জানলে কোনও না কোনও দিন ভাল কাজের প্রস্তাব আসবেই। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য কোনও পথে নয়, আমার কাজের মাধ্যমেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।’’
টলিপাড়ার তারকাদের একাংশ প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে। অরুণিমা বিষয়টাকে কী ভাবে দেখেন? অভিনেত্রী বিশ্বাস করেন, রাজনীতিতেও মানুষকে তাঁর একশো শতাংশ দিতে হয়। অরুণিমার কথায়, ‘‘কাউকে ছোট বা বড় যে কোনও দায়িত্বই দেওয়া হোক, তিনি যেন সেটা পালন করতে পারেন, এটা দেখতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। কিন্তু রাজনীতির করার সময় আমার নেই।’’
অতীতে ভোটে লড়ার প্রস্তাব এলেও চলতি বছরে তাঁর কাছে কোনও প্রস্তাব আসেনি বলেই জানালেন অরুণিমা। বাংলার তারকা রাজনীতিকদের মধ্যে তাঁর কাকে পছন্দ? অরুণিমা হেসে বললেন, ‘‘ওই যে সময় দেওয়ার কথা বলছিলাম। সেটা দেখেই সায়নীর (যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ) কাজ ভাল লাগে। কী সুন্দর কথা বলে! ও যে ভাবে রাজনীতিতে সময় দিচ্ছে, সেটা কিন্তু শিক্ষণীয়।’’
অরুণিমা এই মুহূর্তে কোনও সম্পর্কে নেই। নিজের জীবন এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে বলে জানালেন তিনি। জানুয়ারি মাসে তিনি বাবাকে হারিয়েছেন। অরুণিমার কথায়, ‘‘আমার জীবনে এটা খুব বড় ধাক্কা। অবসাদে ভুগছিলাম। কাজের চুক্তিপত্র সই করার আগে অবধি বাবা দেখে দিতেন। তাই বাবা চলে যাওয়াটা মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে।’’
তবে অভিনেত্রী জানালেন, কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে শুটিংয়ের ফ্লোরই তাঁকে সাহায্য করেছে। এর আগে আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, বিয়ে করবেন একমাত্র বাঙালি পাত্রকে। কিন্তু সেই ‘মনের মানুষ’ কি পাওয়া গেল?
অরুণিমা হেসে বললেন, ‘‘এখন আমিই পরিবারের অভিভাবক। মাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারব না। তাই কলকাতাতেই বিয়ে করতে হবে।’’ পাশাপাশি অরুণিমা জানালেন, তিনি তাঁর জীবনসঙ্গীর মধ্যে যে গুণের সন্ধানে থাকেন, কলকাতা শহরে তা পাচ্ছেন না। তাঁর হেঁয়ালি, ‘‘কলকাতার বাইরে অনেক অপশন আছে। কিন্তু আমি ‘লং ডিসট্যান্ট’ সম্পর্কে বিশ্বাসী নই। তাই অপেক্ষায় রয়েছি।’’
কথা প্রসঙ্গেই অতীত সম্পর্কের উদাহরণ দিলেন অভিনেত্রী। বললেন, ‘‘আগে রাত ১১টায় শুটিং শেষ করেছি। তার পরেও প্রেমিকের বাড়ির নীচে গিয়ে দেখা করে এসেছি। দেখুন, কাউকে ভালবাসলে একসঙ্গে থাকব না, পুজো বা ক্রিসমাস উদ্যাপন করব না— এটা ভাবতেই পারি না! এমনকি তাকে ‘মিস্’ করব না, এটাও আমি পারি না।’’
অরুণিমার মতে, সুপুরুষ নয়, বরং ‘ভাল মানুষ’-এর সন্ধানে রয়েছেন তিনি। বললেন, ‘‘আমি খাইয়ে নেব, দেখে নেব। কিন্তু মানুষটা যেন খাঁটি হন।’’
তবে এ-ও ঘটনা, অরুণিমা কিন্তু প্রায়শই প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব পান। কখনও বন্ধু মহলে, কখনও আবার সমাজমাধ্যমে। হেসে বললেন, ‘‘ছবি পোস্ট করলেই কেউ বলেন বিয়ে করতে চান। আমি নিজে এ সব পড়ি না। বন্ধুদের চোখে পড়লে পাঠায়। কিন্তু জানি, কপালে যা লেখা আছে সেটাই হবে।’’