Karan Johar controversy

পুরুষালি মহিলাদের মিমিক্রির চেয়ে মেয়েলি পুরুষের মিমিক্রি বাজারে বেশি উপাদেয়

আজও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে শুনতে হয়, তিনি কতটা মেয়েলি ছিলেন! শান্তিনিকেতনে পড়তে গেলেই একটি গোটা ছেলে পুরোদস্তুর মেয়ে হয়ে ফিরবে!

Advertisement
মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়
মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ১৬:০৭
কর্ণ জোহর-মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়।

কর্ণ জোহর-মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক : শৌভিক দেবনাথ।

কর্ণ জোহর দুঃখ পেয়েছেন তাঁর একান্ত পরিচিত ইন্ড্রাস্ট্রির সহকর্মী, সহশিল্পী তাঁকে মিমিক্রি করেছেন বলে! কর্ণ বলেছেন তিনি তাঁর মায়ের পাশে বসে টিভিতে অনুষ্ঠান দেখছিলেন, যখন তাঁকে মিমিক্রি করা হয়! সন্তানের চেয়েও মায়েদের দুঃখ বেশি, এই আমাদের মতো সন্তানদের নিয়ে আমাদের মায়েদের মতো মায়েদের!

Advertisement

সন্তানের জন্মের ত্রুটির দায় সবটুকু মায়েদের যেন!

আজ থেকে দশ-বারো বছর আগে তাঁকে মিমিক্রি করার অভিযোগ আনেন ঋতুপর্ণ ঘোষ এক সহশিল্পীরই বিরুদ্ধে। সেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ঋতুপর্ণই। সেই শিল্পীর প্রতি ঋতুর ক্ষোভ উগরে দেওয়া আজও মনে পড়ে!

সে দিন ঋতু তাঁর ইন্ডাস্ট্রির সহশিল্পীকে বলেছিলেন, “তুই শুধু আমাকে অপমান করিসনি, আমার মতো মানুষের সম্প্রদায়কে অপমান করেছিস!”

পুরুষালি মহিলাদের মিমিক্রি বাজারে খায় না, কিন্তু মেয়েলি পুরুষের মিমিক্রি মানুষের পক্ষে বড় উপাদেয়! সে দিন ঋতুপর্ণ সমকামে থেমে থাকেননি, নিজের পরিচিতির সাপেক্ষে হিজড়েদেরও জড়িয়ে নিয়েছিলেন, হয়তো পরিসর বাড়িয়ে নিতে চেয়েছিলেন ঋতু। ঋতুপর্ণ বা কর্ণ জোহরের প্রতিভা কেড়ে নিতে পারবেন না যাঁরা, তাঁরাই এই উপহাসের পসরা নিয়ে বসেন।

আমরা যারা গণতন্ত্রের সাহসে সরকারি চাকরি করতে গিয়েছি, তাদের সারা জীবন সহকর্মীদের সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণ, নির্যাতনে কাঁদতে কাঁদতে অবসাদে চলে যেতে হয়েছে! যার শেষ অবস্থা চাকরি ছেড়ে আত্মহনন!

প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কর্ণ জোহর বা ঋতুপর্ণের মতো অত্যন্ত প্রকট একটি সত্তা নির্মাণ থাকে, কর্ণ জোহর বা ঋতুপর্ণ যাকে প্রতিষ্ঠা দেন, সাধারণ মানুষ তা পারেন না।

কর্ণ বা ঋতুপর্ণ যেন অজস্র মানুষের কাছে আয়না রূপে প্রতিভাত হন, যে আয়নায় নিজের মুখ দেখে সাধারণ মানুষ ভীত হন, উপহাসের অট্টহাসিতে নস্যাৎ করতে চান ঋতুপর্ণ বা কর্ণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আর এক সত্তা, যা অহেতুক ভাবে অসামাজিক!

আজও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে শুনতে হয়, তিনি কতটা মেয়েলি ছিলেন! শান্তিনিকেতনে পড়তে গেলেই একটি গোটা ছেলে পুরোদস্তুর মেয়ে হয়ে ফিরবে! গত শতকেও ধারণা ছিল শান্তিনিকেতনে ছেলেরা দারুণ মেয়েলি কেতায় বলে, “এই গরু সরে যা, ফুল ছুড়ব লাগবে!”

সত্যজিৎ রায়ের মতো মানুষেরও ধারণা ছিল ওই মেয়েলি পুরুষ মানেই সমকামী!

আমি তো মেয়েলি নয় শুধু, শরীরটাকে গড়ে নিয়েছি নারী শরীরে, তা-ও শুনতে হয় সমকামী! অথচ বিষমকামী হয়ে ওঠার সকল ‘মেডিক্যাল’ প্রচেষ্টা, আইনি প্রচেষ্টা, এমনকি সরকার থেকে প্রাপ্ত আমার মহিলা পরিচয়ের কার্ডটিও নস্যাৎ করে আমার ঝেড়ে ফেলা পুংলিঙ্গ বুকে নিয়ে তামাশার আশায় বাঁচেন আমার কত আত্মীয় এবং স্বজন!

আরও পড়ুন
Advertisement