গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আর কয়েক ঘণ্টা পরেই শুরু হয়ে যাবে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। সাত দফা ভোটপর্বের প্রথম দফায় শুক্রবার ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে ভোট হবে ১০২টি আসনে। এই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িও। লোকসভার পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশের ৬০ এবং সিকিমের ৩২টি বিধানসভা আসনের সবক’টিতেই ভোটগ্রহণ হবে এই দফায়।
প্রথম দফার ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার আট মন্ত্রী— নিতিন গডকড়ী (নাগপুর), কিরেণ রিজিজু (অরুণাচল পশ্চিম), ভূপেন্দ্র যাদব (অলওয়ার), সর্বানন্দ সোনওয়াল (ডিব্রুগড়), জিতেন্দ্র সিংহ (উধমপুর), অর্জুন রাম মেঘওয়াল (বিকানের), সঞ্জীব বালিয়ান (মুজফ্ফরনগর) এবং এল মুরুগান (নীলগিরি)।
বেশ কয়েক জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও রয়েছেন ভোটযুদ্ধে। অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সোনওয়ালের পাশাপাশি বিজেপি বিপ্লব দেব (ত্রিপুরা পশ্চিম), উত্তরখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিংহ রাওয়তকে (হরিদ্বার) টিকিট দিয়েছে লোকসভা ভোটে। তামিলনাড়ুর রামনাথপুরম আসনে বিজেপির সমর্থনে নির্দল হিসাবে লড়ছেন সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বহিষ্কৃত এডিএমকে নেতা ও পন্নীরসেলভম। অরুণাচলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা নবাম টুকি এ বার লোকসভায় লড়ছেন রিজিজুর বিরুদ্ধে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিদায়ী কংগ্রেস সাংসদ ভি বৈথিলিঙ্গম এ বারও সেখানে প্রার্থী। প্রথম দফার ভোটে বিহারের গয়ায় বিজেপির সহযোগী হিন্দুস্থানি আওয়াম মোর্চা (হাম)-র প্রার্থী সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম।
বেশ কয়েক জন দলবদলু প্রার্থীও লড়তে নেমেছেন প্রথম দফায়। উত্তরপ্রদেশের পিলিভিটে বিদায়ী সাংসদ বরুণ গান্ধীর বদলে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা তথা যোগী আদিত্যনাথ সরকারের মন্ত্রী জিতিন প্রসাদকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। রাজস্থানের চুরুতে বিদায়ী বিজেপি সাংসদ তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের আত্মীয় রাহুল কসওঁয়া এ বার বিজেপির প্রার্থী। ওই রাজ্যেরই নাগৌরে বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ জ্যোতি মির্ধা।
শুক্রবার প্রথম দফায় অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং মেঘালয়ের দু’টি করে আসনে ভোটগ্রহণ হবে। একটি করে আসনে ভোটগ্রহণ হবে ছত্তীসগঢ়, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর, জম্মু ও কাশ্মীর, লক্ষদ্বীপ এবং পুদুচেরিতে। উল্লেখ্য, মণিপুরে মোট দু’টি লোকসভা আসন। ইনার মণিপুর এবং আউটার মণিপুর। নির্বাচন কমিশন আউটার মণিপুরকে ভাগ করে দু’দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুক্রবার আউটার মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর এবং চান্দেল জেলার ১৫টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ হবে। আউটার মণিপুরের অন্তর্গত বাকি ১৩টি বিধানসভায় ভোটগ্রহণ হবে ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায়। এর পাশাপাশি, বিহারের চার, উত্তরাখণ্ডের পাঁচ, মহারাষ্ট্রের পাঁচ, উত্তরপ্রদেশের আট এবং রাজস্থানের ১২টি আসনে ভোট হবে শুক্রবার। তবে এই দফায় সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হচ্ছে তামিলনাড়ুতে। সে রাজ্যের ৩৯টি লোকসভা আসনের সবগুলিতেই।
তামিলনাড়ুতে ভোটের লড়াইয়ে আছেন শাসকদল ডিএমকে প্রথম সারির নেতা-নেত্রীরা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় টিআর বালু (শ্রীপেরুমবুদুর), দয়ানিধি মারান (চেন্নাই মধ্য), এ রাজা (নীলগিরি), প্রয়াত করুণানিধির কন্যা তথা মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের বোন কানিমোঝি রয়েছেন এই তালিকায়। রয়েছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের পুত্র কার্তি (শিবগঙ্গা), রাজ্য বিজেপির সভাপতি কে আন্নামালাই এবং তেলঙ্গানার সদ্য-প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি নেত্রী তামিলিসাই সৌন্দর্যরাজন (চেন্নাই দক্ষিণ)।
২০১৯ সালে উত্তরবঙ্গের তিন কেন্দ্র-সহ ১০২টি আসনের মধ্যে মোট ৪৫টিতে জিতেছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্যে বিপুল জয় পেয়েছিল তারা। এ বার কয়েকটি আসনে জোর টক্কর হতে পারে। পশ্চিম ত্রিপুরায় বিপ্লবের বিরুদ্ধে বামেদের সমর্থনে লড়ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশিস সাহা। অসমের যোরহাটে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের পুত্র গৌরব। মেঘালয়ের তুরা লোকসভা কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার বোন, বিদায়ী সাংসদ আগাথা শাসকদল এনপিপির টিকিটে বিজেপির সমর্থনে লড়ছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী জেনিথ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমার ভাই।
মেঘালয়েরই শিলং লোকসভা কেন্দ্রে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিদায়ী সাংসদ ভিনসেন্ট পালা এ বার কংগ্রেসের প্রার্থী। রাজস্থানে এ বার কংগ্রেসের সমর্থনে সীকর কেন্দ্রে লড়ছেন সিপিএম নেতা অমরা রাম এবং নাগৌরে বিদায়ী সাংসদ তথা রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির প্রধান হনুমান বেনীওয়াল। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের পুত্র তথা বিদায়ী সাংসদ নকুল এ বারও তাঁর পারিবারিক আসন ছিন্দওয়াড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী।
মহারাষ্ট্রের বিদর্ভের যে পাঁচটি লোকসভা আসনে শুক্রবার ভোট হবে তার মধ্যে রয়েছে মাওবাদী উপদ্রুত গড়ছিরৌলিতে। ছত্তীসগঢ়ের বস্তারেও ভোট প্রথম দফায়। চলতি সপ্তাহেই বস্তার লোকসভা লাগোয়া কাঁকেরে মাওবাদী গেরিলা বাহিনী পিএলজিএ-র ২৯ জন সদস্য নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন। কড়া নিরাপত্তায় ওই আসনগুলিতে ভোটের ব্যবস্থা করেছে কমিশন।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের যে আটটি আসনে শুক্রবার ভোট, সেখানে গত বার তিনটি পেয়েছিল বিজেপি। জোট বেঁধে লড়ে মায়াবতীর বিএসপি তিন এবং অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি দু’টিতে। এ বার আলাদা লড়ে কয়েকটি আসনে ওজনদার সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়ে মায়াবতী ‘ইন্ডিয়া’র ভোট কাটবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়া নাগিনায় দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ প্রার্থী হওয়ায় সুবিধা পেতে পারে বিজেপি। জাট নেতা জয়ন্ত চৌধরির দল আরএলডির সঙ্গে জোটও বিজেপিকে সুবিধা দিতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।