প্রতীকী চিত্র।
কৃত্রিম মেধা বিষয়ে খুঁটিনাটি শেখার সুযোগ করে দিল পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই বিষয়টি একাদশ এবং দ্বাদশের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মেশিন লার্নিং, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশলও শেখানো হবে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “চলতি বছরেই বিজ্ঞান শাখার পড়ুয়াদের জন্য কৃত্রিম মেধা সংক্রান্ত কোর্স শুরু করা হয়েছিল, যার পাঠদানের কৌশল অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও। সেই কোর্সে বহু পড়ুয়াই ভর্তি হওয়ার আগ্রহ দেখায়। তাই কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের মতোই এই বিষয়টিকেও সার্বিক ভাবে সহজ করে শেখার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, যাতে প্রযুক্তিবিদ্যা নিয়ে রাজ্যের আগ্রহী পড়ুয়ারা স্কুল স্তর থেকেই পড়াশোনা করতে পারে।”
শিক্ষা সংসদের তরফে প্রকাশিত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণিতে কম্পিউটার ফান্ডামেন্টালের সমস্ত বিষয়ের পাশাপাশি, পাইথন প্রোগ্রামিং, লিনিয়ার অ্যালজেব্রা, ফাউন্ডেশন অফ এআই, রিজ়নিং-এর মতো বিষয়গুলি শেখানো হবে। ক্লাসের পাশাপাশি, প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসও করানো হবে।
দ্বাদশের পাঠ্যক্রমে থাকছে মেশিন লার্নিং, স্ট্যাটিস্টিক্স ফর মেশিন লার্নিং, সুপারভাইজ়ড লার্নিং, কনফিউশন ম্যাট্রিক্স-এর মতো বিষয়গুলি। এ ক্ষেত্রে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে। উভয় ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত ১০ ঘণ্টা রেমিডিয়াল ক্লাসের জন্য বরাদ্দ থাকছে, যাতে পড়ুয়াদের সহায়তায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা অতিরিক্ত সময় দিতে পারেন।
এই প্রসঙ্গে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “কৃত্রিম মেধার যুগে আমরা পা দিয়েছি। তাই পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এই বৈপ্লবিক চিন্তাভাবনাকে স্বাগত জানাতেই হয়। পাশাপাশি, বিজ্ঞান শাখার গণ্ডি পেরিয়ে কলা এবং বাণিজ্য শাখার পড়ুয়াদের কাছে সহজলভ্য করে তোলা হয়েছে। তাই অ্যাপ্লায়েড আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের সাহায্যে ভিন্ন শাখার পড়ুয়াদের এই প্রযুক্তির বিষয়ে পাঠদান করাটাও সহজ হয়ে উঠবে, তারা পড়াশোনার প্রতি আরও আগ্রহী হবে।”
হীরাপুর মানিকচাঁদ ঠাকুর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য জানিয়েছেন, এই বিষয়টি খুব ইতিবাচক। এই পরিবর্তনটির প্রয়োজন ছিল। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গেলে, এই বিষয়টিকে শিখে নিতে হবে।
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার এই বিষয়ে বলেন, “পড়ুয়াদের প্রযুক্তির উন্নতির বিষয়গুলিকে স্কুল স্তর থেকেই শিখতে হবে। তা না হলে সার্বিক স্তরে কৃত্রিম মেধার মতো প্রযুক্তি ব্যবহার এবং তা প্রয়োগের কৌশল শিখতে পরবর্তী কালে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হবে। স্কুল স্তরেই যে হেতু তা শেখার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, তাই শিক্ষা সংসদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”
প্রসঙ্গত, ‘টিচিং লার্নিং’ পদ্ধতিও নির্দিষ্ট সময়ের অধীনে সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। প্রতি বছর সমস্ত বিষয়ের জন্য মোট ২০০ ঘণ্টা ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ ঘণ্টা প্রথম সিমেস্টার এবং দ্বিতীয় সিমেস্টারের জন্য মোট ৮০ ঘণ্টা করে সময় ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়াও রেমিডিয়াল ক্লাস, টিউটোরিয়াল ক্লাস ও হোম অ্যাসাইনমেন্ট এর জন্য ২০ ঘণ্টা করে সময় দিতে হবে।