প্রতীকী ছবি।
পর্ষদের নির্দেশকে এ বার বুড়ো আঙুল রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের প্রধানশিক্ষকদের। বেশির ভাগ স্কুলই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশকে অমান্য করে মুচলেকা না দিয়েই বিভিন্ন সেন্টার থেকে অ্যাডমিট কার্ড গ্রহণ করল।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ গত বছর ২৯ ডিসেম্বর এবং চলতি মাসের ২০ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় যে, সমস্ত স্কুলের প্রধানশিক্ষককে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড নেওয়ার সময় মুচলেকা জমা দিতে হবে ১০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে। পর্ষদের এই নির্দেশের পড়েই প্রধানশিক্ষক মহলে ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল। এ বার অ্যাডমিট কার্ড বিতরণের সময় মুচলেকা না দিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড গ্রহণ করল রাজ্যের বেশির ভাগ স্কুল।
অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অভিভাবক এবং পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অকারণ বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করেছিল। ২০২৩ সালের নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কোনও সম্পর্ক নেই। অন্যায় ভাবে মুচলেকা নেওয়ার চেষ্টা করছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তাই আমরা এর বিরোধিতা করে মুচলেকা দিইনি।”
প্রসঙ্গত, নবম শ্রেণিতে ওঠার পরই মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য পর্ষদের কাছে নাম নথিভুক্তকরণ বা রেজিস্ট্রেশন করতে হয় পড়ুয়াদের। এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্কুলের। বিগত বছরে দেখা গেছে নবম শ্রেণির থেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও বেশ কিছু পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এমনকি, মাধ্যমিক পরীক্ষার ক’দিন আগেও পর্ষদের রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি বেশ কিছু স্কুলে অনেক পড়ুয়ার। যার ফলে বার বার জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে স্কুল এবং পর্ষদকে। এর ফলে বেশ কিছু মামলা আদালত অবধিও গড়িয়েছে।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এখন যাতে সমস্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা দ্রুত তাদের অ্যাডমিট কার্ড হাতে পায় আমরা সে দিকটায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। মুচলেকার বিষয়টি পরবর্তী পর্যায়ে আমরা বিবেচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
পর্ষদের দেওয়া নির্দেশিকায় ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের পরেও নাম নথিভুক্তকরণের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। সেখানে যে সমস্ত পড়ুয়া রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেনি তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রধানশিক্ষকদের স্কুলের তরফ থেকে মুচলেকা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “৯৫ শতাংশ স্কুল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এই নির্দেশকে মান্যতা দেয়নি। তারা প্রতিবাদ জানিয়ে মুচলেকা ছাড়াই অ্যাডমিট কার্ড গ্রহণ করেছে। যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অপমানজনক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এই প্রতিবাদ করায় আমরা শিক্ষক হিসেবে গর্বিত।”
পর্ষদের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড নিতে যাওয়ার সময় স্কুলের প্রধানশিক্ষককে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে মুচলেকা জমা দিতে হবে। সেখানে প্রধানশিক্ষককে উল্লেখ করতে হবে যে, তাঁর বিদ্যালয়ের কোনও পড়ুয়ার রেজিস্ট্রেশন আর বাকি নেই। আর বাকি থাকলেও, কত জনের বাকি রয়েছে তা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে।