প্রতীকী চিত্র।
স্কুল ছুটির পরে স্কুলের বিদ্যুৎ আর ব্যবহার করা যাবে না। রাজ্যের এই নয়া নির্দেশিকা ঘিরে উঠছে প্রশ্ন। বিদ্যুৎ অপচয় রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। বিদ্যুৎ বিলের খরচ যেখানে স্কুলগুলি নিজেরাই বহন করে, সেখানে এভাবে নির্দেশিকার মাধ্যমে নজরদারির উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে শিক্ষামহল।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “স্কুলের নির্ধারিত সময়সীমার পরেও বহু কাজ থাকে। এই নির্দেশিকার ফলে সেই কাজগুলি হবে কী করে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।”
রাজ্যের সরকারি দফতর এবং স্কুলে বিদ্যুতের অপচয় বন্ধে নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশ পাওয়া মাত্রই জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (ডিআই)-সহ স্কুলগুলিকে বিদ্যুতের অপচয় রুখতে নির্দেশিকা জারি করেছেন স্কুল শিক্ষা দফতরের কমিশনার।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “স্কুলগুলির বিদ্যুৎ বিল সরকার দেয় না। তা হলে সরকার কেন এ হেন নির্দেশিকা জারি করল? ডিআই অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। তা শেষ করতে গেলে বহু ক্ষেত্রে স্কুল ছুটির পরেও কাজ করতে হয়।”
বেশ কিছু স্কুলের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রছাত্রীদের স্পেশাল ক্লাস নেওয়া হয়। এই নির্দেশিকার পরে কি সেই ক্লাস নেওয়ার জন্যও আলাদা করে অনুমতি নিতে হবে? আর কে-ই বা দেবে সেই অনুমতি?
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ছুটি ও ভোট পর্ব পেরিয়ে স্কুল খুললেও কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার কারণে এখনও স্বাভাবিক ভাবে ক্লাস শুরু হতে পারেনি। বহু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী স্কুলভবনে থাকার কারণে বিদ্যুৎ বিল বেশি ওঠার অভিযোগও সামনে এসেছে। তার পরেই বিদ্যুতের অপচয় রুখতে এই কড়া সিদ্ধান্ত প্রশাসনের।
এ প্রসঙ্গে কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড মিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “স্কুলগুলি কী ভাবে বিদ্যুৎ বিল দেয়, তা নিয়ে সরকারের আগেও মাথাব্যথা ছিল না, আজও নেই। দীর্ঘ দিন ধরে যে অতিরিক্ত বিল স্কুলগুলিকে বহন করতে হবে, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট বার্তা নেই সরকারের। নজরদারির আগে এই বিষয়গুলির ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতরের সদর্থক ভূমিকা থাকা উচিত।”
শুধু বিদ্যুৎ বিল অপচয় নয়, এই নির্দেশিকায় স্কুলের নির্ধারিত সময়ের পরে নিজে বা অধীনস্থ আধিকারিক যেমন সার্কেল ইনস্পেক্টর বা শিক্ষাবন্ধুদের দিয়ে আচমকা স্কুল পরিদর্শন করতে বলা হয়েছে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকদের। বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে পরির্দশনকারীদের।
এই নির্দেশিকা স্কুলগুলি এবং ডিআই অফিস ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদেও পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, সরকার রাজ্যের স্কুলগুলিকে বছরে এককালীন টাকা দেয় কম্পোজিট গ্র্যান্ডের মাধ্যমে। সেই টাকা দেওয়া হয় স্কুলগুলির ছাত্র সংখ্যার উপর ভিত্তি করে, কিন্তু স্কুলগুলির বিদ্যুৎ বিলের অঙ্ক বছরে তার চেয়ে হয় অনেক বেশি। এখানেই নির্দেশিকা ঘিরে থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন।