‘হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড।’ নিজস্ব চিত্র।
পড়ুয়ার ব্যক্তিত্ব এবং লাইফ স্কিল বিকাশের সার্বিক রিপোর্ট কার্ড তৈরি করতে চলেছে রাজ্য। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) এবং জাতীয় শিক্ষানীতিকে মান্যতা দিয়ে এই রিপোর্ট কার্ড তৈরি করা হবে। যার নামকরণ করা হয়েছে ‘হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড।’
এ বার থেকে আর শ্রেণিভিত্তিক নয়, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক অগ্রগতির রূপরেখা তৈরি হবে একটি রিপোর্ট কার্ডে। পুস্তিকা আকারে সেই রিপোর্ট কার্ড ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে বিভিন্ন স্কুলে। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির মধ্যে তিনটি পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন হবে। সেখানে যেমন জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য থাকবে, একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভাবে কী ভাবে নিজেকে তুলে ধরছে, তা-ও উল্লেখ করা হবে। এ ছাড়াও থাকছে পড়ুয়ার নাম, ঠিকানা, আধার নম্বর, রক্তের গ্রুপ-সহ নানা তথ্য।
পার্ক ইনস্টিটিউশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “খুব ভাল একটি উদ্যোগ এটি। শুধু পরীক্ষার নম্বর মাপকাঠি নয়, পর্যায়ক্রমে পড়ুয়াদের সার্বিক বিকাশ ও মূল্যায়ন হবে, এর মাধ্যমে। বুনিয়াদি শিক্ষার পাশাপাশি সার্বিক বিকাশেরও পর্যালোচনা করা যাবে এতে।”
তবে তিনটি পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের প্রতিটি ভাগের উল্লেখিত পূর্ণমান নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক মহল। কারণ বর্তমান মূল্যায়নের নম্বরের বিভাজনের সঙ্গে এর অনেকটাই তফাৎ বলে মনে করছেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা।
নয়া নিয়মে মাসে এক বার পড়ুয়াদের পঠন-পাঠন ও দক্ষতার বিকাশের মূল্যায়ন করা হবে। এই রিপোর্ট কার্ড তৈরি করতে পড়ুয়াদের দৈহিক, মানসিক ও বৌদ্ধিক এই তিনটি স্তরে বিকাশে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “এই রিপোর্ট কার্ডের মাধ্যমে একটি শিশুর সর্বাঙ্গীন মানসিক বিকাশ এবং শিক্ষাগত অগ্রগতির মূল্যায়ন নথিভুক্ত থাকবে। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে পড়ুয়াদের সামগ্রিক উন্নয়নের রিপোর্ট পাওয়া যাবে এই পদ্ধতিতে।”
বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, এই ‘হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড’-এর মাধ্যমে পড়ুয়ার সাংগঠনিক দক্ষতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা, বন্ধুত্ব স্থাপন, নেতৃত্বদানের দক্ষতা-- সমস্ত কিছু যাচাই করে গ্রেড দেওয়া হবে। লেখায় খামতি রয়েছে কিনা, সেটাও রিপোর্ট কার্ডে উল্লেখ করতে পারবে শিক্ষকরা।
নারকেলডাঙা হাইস্কুলের শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের জন্য হলিস্টিক প্রগ্রেস রিপোর্ট দেওয়ার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অভিনব। এতে ছাত্রছাত্রীদের কী লাভ হবে, সেটা দেখার জন্য কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের শিক্ষানীতির হুবহু অনুকরণ করছে। এটা কোন বাধ্যবাধকতা থেকে? তাহলে রাজ্যের বিকল্প শিক্ষানীতি তৈরি করাটা কি স্রেফ লোক দেখানো ছিল?”
চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে এই রিপোর্ট কার্ডটি কার্যকর করতে বলা হয়েছে সরকারের তরফে। এ বছর সব শ্রেণির জন্যই দেওয়া হয়েছে রিপোর্ট কার্ড। আগামী বছর থেকে তা শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণির জন্য দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।