পাঠরত ছাত্রীরা বৃদ্ধাশ্রমে বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র।
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কমছে যৌথ পরিবারের সংখ্যা, পাশাপাশি ছোট পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ছেলে কিংবা মেয়ে বিদেশে পড়াশোনা বা চাকরি করছেন তাই বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখার কেউ নেই। এবার তাঁদের শারীরিক অসুস্থতা এবং মানসিক নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য তৈরি হয়েছে নয়া কর্মসংস্থান। তাঁর জন্য প্রয়োজন জেরিয়াট্রিক কেয়ার অ্যান্ড কাউন্সিলিং এবং বেসিক লাইফ সাপোর্টের মতো প্রশিক্ষণ। এই দু’টি বিষয়ের উপর ৩০ ঘণ্টার সার্টিফিকেট পাঠক্রম চালু করল রামকৃষ্ণ সারদা মিশন বিদ্যাভবন কলেজ। কলেজের প্রিন্সিপাল প্রব্রাজিকা বেদরূপপ্রাণা বলেন, “করোনা অতিমারির পর স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রয়োজনীয়তা যেমন বেড়েছে তেমনই এই ক্ষেত্রগুলিতে চাকরি পাওয়ার সুযোগও তৈরি হয়েছে। এই দু’টি সার্টিফিকেট পাঠক্রমের মাধ্যমে শুধু চাকরি নয় স্বনির্ভর হওয়ারও সুযোগ থাকছে।”
জেরিয়াট্রিক কাউন্সিলিং-এর পাঠক্রমে আসন সংখ্যা মোট ৩০। বয়স্ক মানুষদের প্রধানত মানসিক নিঃসঙ্গতা দূর করা এবং তাঁদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য যাতে ভাল থাকে তাঁর উপরেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই পাঠক্রমে। তাঁর জন্য প্রশিক্ষণরত ছাত্রীদের শেখানো হয় ‘আকুপ্রেশার’ থেরাপি। সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একই সঙ্গে শেখানো হয় প্যারামেডিক্যাল কোর্স যার নাম হল ‘বেসিক লাইফ সাপোর্ট’। এই পাঠক্রমের মাধ্যমে কলেজের ছাত্রীদের প্রাথমিক নার্সিং-এর বিষয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া ব্লাড প্রেসার মাপা, রক্ত নেওয়া, সিপিআর-এর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়ে থাকে।
এই দু’টি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পড়ে মূলত চাকরির সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমে। এ ছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে যারা, ছেলে-মেয়ে বিদেশে থাকেন এমন পরিবারের বয়স্ক মা-বাবাকে দেখার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। এর সঙ্গে বেসিক লাইফ সাপোর্টের প্রশিক্ষণ থাকলে আধুনিক অ্যাম্বুলেন্সগুলিতেও পরিষেবা দেওয়ার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।
শুধু পুঁথিগত পড়াশোনা নয়, হাতে কলমে কাজ শেখার জন্য কলেজের তরফ থেকে পাঠরত ছাত্রীদের ‘নতুন ঘর’ নামে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠান হয় প্রশিক্ষণের জন্য। যাতে তাঁরা এই বিষয়ে আরও সচেতন হয়ে উঠতে পারেন। স্নাতকোত্তরে হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা কোর্সও চালু করেছেন কলেজ কতৃপক্ষ। সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পাঠক্রমটি পড়ানো হয়ে থাকে। স্নাতকোত্তরে এই পাঠক্রমের আসন সংখ্যা ২৫। যাঁরা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হবেন, তাঁদের জন্য প্রথম প্রেফারেন্স হিসাবে জেরিয়াট্রিক কেয়ার অ্যান্ড কাউন্সিলিং এবং বেসিক লাইফ সাপোর্টের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। আসন ফাঁকা থাকলে সেই শূন্যস্থানে সার্টিফিকেট পাঠক্রম করার সুযোগ পান স্নাতকে পাঠরত কলেজের পড়ুয়ারা।