আগমেশ্বরী কালী
পশ্চিমবঙ্গের এক আধ্যাত্মিক স্থান নবদ্বীপ। যার কোনায় কোনায় আছে শ্রীচৈতন্যের ছোঁয়া। এই নবদ্বীপেই আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল আগমেশ্বরী কালীর পুজো। লোকমুখে শোনা যায়, তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ এই পুজো শুরু করেছিলেন। সেই সময়ে নাকি মাতৃপুজোর কোনও রকম প্রচলন ছিলনা। তাই তিনি মা কালীর কাছে তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়ার কাতর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এর পরেই নাকি মা কালী স্বপ্নে দেখা দেন তাঁকে। এবং বলেন, ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে যে মহিলাকে প্রথম দেখতে পাবেন, তিনিই মা কালী।
দেবীর নির্দেশ মতো পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ওই তন্ত্রসাধক দেখতে পান এক কৃষ্ণবর্ণা নারীকে। তাঁর খোলা চুল, ডান পা সামনের দিকে এগিয়ে। হাত তুলে ঘুঁটে দিচ্ছেন ঘরের দেওয়ালে। এই নারীর রূপ দেখেই কৃষ্ণানন্দের আগের রাতে পাওয়া স্বপ্নাদেশের কথা মনে পড়ে যায়। বুঝতে পারেন, ইনিই মা দক্ষিণা কালী। এই দৃশ্য কৃষ্ণানন্দ ভক্তিভরে মনের মধ্যে গেঁথে নেন। তার পরে ঠিক সেই রূপেই একটি মাতৃমূর্তি স্থাপন করেন নিজ হাতে। কথিত, এই ঘটনার পরে তৎকালীন দুই বাংলাতেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন এই দক্ষিণাকালী। খবর পেয়ে বহু মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেন এই নবদ্বীপে। আজও এই কৃষ্ণানন্দের সাধনা ক্ষেত্রে দক্ষিণাকালীর পুজো হয়ে আসছে সাড়ম্বরে।
এ ছাড়াও এখানকার কিছু রীতি ভক্তদের অবাক করে। এখানে দেবীমূর্তির চক্ষুদান করা হয় মূর্তির পিছন দিক থেকে। স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা জানান, মায়ের মুখমণ্ডল দর্শন না করে চক্ষুদানের এই রীতি রয়েছে বহুকাল ধরে। তাই তাঁরা আজও তা মেনে আসছেন। এই পুজো বৈষ্ণব মতে হওয়ায় কোনও বলি প্রথা নেই এখানে। এই পুজোর আর একটি বিশেষত্ব হল, আগমেশ্বরী মায়ের সামনে গোপাল বিগ্রহ রেখে তবেই পুজো করা হয়। শোনা যায়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এক বার রাতে স্বপ্নে মায়ের ভয়ঙ্কর বিরল রূপ দর্শন করেছিলেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy