কলকাতার বনেদি বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো
শুধু দুর্গাপুজো বা কালীপুজোতেই সীমাবদ্ধ নেই কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো। জগদ্ধাত্রী পুজোও বেশ আড়ম্বরের সঙ্গেই উদযাপন করা হয়। সেরকমই বেশ কিছু বনেদি বাড়ির হদিস নিয়ে এল আনন্দ উৎসবের এই প্রতিবেদন। এক নজরে দেখে দিন সেই সব পুজোর ইতিহাস, প্রতিমার সাজ, ভোগ ইত্যাদি।
বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের পুজো শুরু হয় ১৯৬৬ সালে। আটচালা বাড়ি এবং ডাকের সাজে সুসজ্জিত প্রতিমা। দিনে তিন বার পুজো হয়। ভোগ হিসাবে থাকে খিচুড়ি, পোলাও, সাদা ভাত, ভাজা, বিভিন্ন তরকারি এবং মাছ।
ভবানীপুরে গিরিশ ভবনে প্রায় ২০০ বছর আগে পুজো শুরু হয় কালাচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। বেনারসি শাড়ি এবং সোনা-রুপোর গয়না দিয়ে সাজানো হয় প্রতিমাকে। জগদ্ধাত্রী পুজোয় এই বাড়ির একটি বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে, যাত্রাপালা। এক সময় এখানে অভিনয় করেছেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ, উত্তমকুমার। বর্তমানে সন্ধ্যায় যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পরিবারের সদস্যরা অভিনয় করে থাকেন। আর নৈবেদ্যে থাকে খিচুড়ি, পোলাও, লুচি, ভাজা ইত্যাদি।
তালতলার ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোর সূচনা তারকেশ্বরের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে। পরবর্তীকালে তালতলার বাড়িতে পুজো হয়। ডাকের সাজের প্রতিমা। এবং প্রতিমার চালিতে থাকে পট। তিনবার পুজোর মধ্যে দ্বিতীয় পুজোতে ১০৮টি পদ্ম ও প্রদীপ নিবেদন করা হয়। প্রথম পুজোয় ভোগ থাকে সাদা ভাত, শুক্তো, ভাজা ও খিচুড়ি। দ্বিতীয় পুজোয় ভোগ থাকে লুচি। এবং তৃতীয় পুজোয় থাকে পোলাও।
বউবাজারের মতিলাল বাড়ির পুজো শুরু করেন বিশ্বনাথ মতিলাল। দু’শো বছরের বেশি পুরনো এই পুজো। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত দেবীকে পরানো হয় বেনারসি। ধুনো পোড়ানো এবং কনকাঞ্জলি এই পুজোর বিশেষ অঙ্গ। ঘোটকাকৃতির সিংহের অবস্থান লম্বালম্বি।
দর্জিপাড়ার দুর্গাচরণ মিত্রের বাড়ির পুজো প্রায় আড়াইশো বছরেরও বেশি পুরনো। ডাকের সাজে সজ্জিত সাবেকি প্রতিমা। ডান পায়ের উপর বাঁ পা মুড়ে, ঘোটকমুখী সিংহের উপর বিরাজমান দেবী। জগদ্ধাত্রী ইষ্ট দেবী তাই তিরকাঠি দিয়ে ঘেরা হয় না। পরিবর্তে দেবীর অর্ঘ্য বাঁধা হয় কলাপাতায়।
জানবাজারে রানি রাসমণির বাড়িতে পুজো শুরু হয় ১৮২০ সালে। নেপথ্যে প্রীতরাম দাস। কুমোরটুলি থেকে সাবেক সাজের প্রতিমা নিয়ে আসা হয়। তবে আগে বীরভূম থেকে প্রতিমা তৈরি করতে আসতেন শিল্পীরা।
বিডন স্ট্রিটে ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়িতে রামদুলাল দে সরকার পুজো শুরু করেন ১৭৮০ সালে। কাঠের সিংহাসনে অধিষ্ঠাত্রী দেবীর ডাকের সাজ। অতসী ফুলের রঙের প্রতিমা এবং গোলাকৃতি চালি কাগজের। ফলমূল, সন্দেশ, দই থাকে নৈবেদ্যে। এছাড়াও ঘিয়ে ভাজা লুচি, নুন ছাড়া আলু, পটল ও বেগুনভাজা, নাড়ু ও সন্দেশ দিয়ে ভোগ সাজানো হয়। তন্ত্র মতে ত্রিসন্ধ্যা দেবীর পুজো হয়। প্রথম পুজোয় চালকুমড়ো ও আখ বলি হয়। দ্বিতীয় পুজোয় কুমারী পুজো হয়। তা ছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুজোর সন্ধিক্ষণে ১০৮টি রুপোর প্রদীপ দেওয়া হয়।
বেনিয়াটোলা স্ট্রিটে বি.কে. পালের বাড়িতে পুজো শুরু করেন বটকৃষ্ণ পাল, ১৯০০ সালে। দুই পা মুড়ে সিংহের উপর দেবীর অবস্থান। আর দেবীর দুই পাশে থাকেন চার সখী। দিনে তিন বার পুজো ছাড়াও হয় সন্ধিপুজো। আর এই সন্ধিপুজোয় আধ মণ চালের নৈবেদ্য, গোটা ফল, ১০৮টি পদ্ম ও প্রদীপ নিবেদন করা হয়। রুপোর বাসন ব্যবহৃত হয় সন্ধিপুজোয়। ভোগ হিসাবে থাকে লুচি, মিহিদানা, সন্দেশ। এই পুজোর একটি বিশেষত্ব হল সিংহের গায়ে লাগানো হয় আকন্দ তুলোর কোয়া। আরও একটি ঐতিহ্য হল বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রা।
পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের খেলাতচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে পুজো শুরু হয় ১৮৪২ সালে। নেপথ্যে খেলাতচন্দ্র ঘোষ। ডাকের সাজের সাবেকি প্রতিমা। দেবীর বাহন পৌরাণিক সিংহ। প্রতিমার পিছনে থাকে সূর্যাকৃতি তামার চালি। দেবীর ডান দিকে নারদ এবং বাঁ দিকে নীলকণ্ঠ ভৈরবের মূর্তি। কনকাঞ্জলি ও কুমারীপুজোর চল রয়েছে এখানে। দিনে তিন বার পুজো দেওয়ার পাশাপাশি সন্ধিপুজো হয় রাজকীয় ভাবে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy