Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Bengali Actor

Debottam Majumder: না জেনেই ওকে খুঁজতে ছুটতাম পাঁচ-ছ’কিলোমিটার দূরের পুজোয়: দেবোত্তম মজুমদার

কোথায় থাকত এলাকা চিনতাম, বাড়ি চেনা ছিল না। পর পর দু’বছর পুজোয় আমরা তিন বন্ধু মিলে ওই এলাকার পুজোয় ঘুরঘুর। যদি তার দেখা মেলে!

 দুর্গাপুজো এলেই সব খারাপ, সব অশুভ কেটে ভাল কিছু হবে। হবেই।

দুর্গাপুজো এলেই সব খারাপ, সব অশুভ কেটে ভাল কিছু হবে। হবেই।

দেবোত্তম মজুমদার
দেবোত্তম মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৩২
Share: Save:

আমার পুজো এখনও ছেলেবেলাকে ছুঁয়ে দেখার আর এক নাম। সেই কোন ছোটবেলায় মা একটা জিনিস শিখিয়েছিল— মা দুর্গার কাছে মন থেকে কিছু চাইলে তিনি ঠিক শোনেন। ব্যস! বসে পড়তাম খাতা-পেন্সিল নিয়ে। কী কী চাই লিখে ফেলতে। মা দুর্গার কাছেই পৌঁছে যেত আমার সেই খোলা চিঠি। বরণের সময়ে নিয়ে যেতেন আমার মা। সেই থেকেই বিশ্বাস হয়ে গিয়েছে কেমন। দুর্গাপুজো এলেই সব খারাপ, সব অশুভ কেটে ভাল কিছু হবে। হবেই।

ছোটবেলায় বাবা যেমন আমায় কোলে নিয়ে প্রতিমার সামনে দাঁড়াতেন, এখন আমিও দাঁড়াই। সামনে মা দুর্গা। আর কোলে আমার ছোট্ট দুর্গা। ২০১৯-এ আমার মেয়ের প্রথম পুজোর সেই স্মৃতি আমার বড্ড কাছের, বড্ড প্রিয়। বাবা হিসেবে যেন জীবনে পূর্ণতার স্বাদ পাওয়া।

পুজোর ক'দিন আমি পুরোদস্তুর ‘ঘরের ছেলে’। বাড়ির পুজোয় থাকি। বছরভরের পরিশ্রমের পর এই পাঁচটা দিন টানা কাজ বন্ধ। বাড়ির লোকের সঙ্গে, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে একদম নিখাদ ছুটি কাটাই। জমিয়ে আড্ডা মারি, ঠাকুর দেখতে বেরোই। আর বেরিয়েই খাইখাই! ফুচকা, রোল, চাউমিন, চপ, কাটলেট! রাস্তার খাবার ছাড়া আবার পুজো কীসের! ধারাবাহিকের হাত ধরে এখন হয়তো অনেক মানুষ আমায় চেনেন, ভালবাসেন। কিন্তু ‘কেয়াপাতার নৌকো’র সোনাবাবু হই, আর আজকের ‘খড়কুটো’র ঋজু— সে সব অভিনয়ের খাতিরে পাওয়া পেশাগত পরিচয়। দেবোত্তম নিজে একেবারে সাধারণ। আর পাঁচজনের মতোই। গোটা পুজো ঠিক সে ভাবেই কাটাতে ভালবাসি।

পুজোর ক'দিন আমি পুরোদস্তুর 'ঘরের ছেলে'।

পুজোর ক'দিন আমি পুরোদস্তুর 'ঘরের ছেলে'।

তবে হ্যাঁ, ‘কেয়াপাতার নৌকো’র সময়ে বিসর্জনে গিয়েছিলাম বাড়ির প্রতিমা নিয়ে। বাবুঘাটে লোকজন ‘সোনাবাবু’কে চিনে ফেলেছিলেন। সে কী উত্তেজনা! ওঁদেরও, আমারও! নিজেকে কেমন মা দুর্গার রথের সারথি মনে হচ্ছিল। আমিই যেন মা-কে কৈলাসে নিয়ে যাচ্ছি!

পুজোয় প্রেমের একটা মজার গল্প আছে আমার। তখন বোধ হয় দ্বাদশ শ্রেণি। স্কুলেরই একটি মেয়েকে ভাল লাগত খুব। সে কোথায় থাকত এলাকা চিনতাম, বাড়ি চেনা ছিল না। পর পর দু’বছর পুজোয় আমরা তিন বন্ধু মিলে ওই এলাকার পুজোয় ঘুরঘুর। যদি তার দেখা মেলে! নাঃ, দেখা পাইনি। পুজোর প্রেম ব্যর্থই থেকে গিয়েছিল।

সাত বছর পরে সেই কন্যের সঙ্গেই আবার যোগাযোগ। এবং প্রেম। সেই মেয়েকেই বিয়ে করেছি ন’বছর হল। এখন সে-ই আমার মেয়ের মা। আর মজার কথাটা হল— প্রেমপর্বে জানা গিয়েছিল, পুজোয় ওরা থাকত যোধপুর পার্কে ওদের পৈতৃক বাড়িতে। আমি তখন থাকি পাশের পাড়া সেলিমপুরে। অথচ না জেনেই ওকে খুঁজতে ছুটতাম পাঁচ-ছ’কিলোমিটার দূরের পুজোয়! যাকগে বাবা, ব্যর্থ প্রেমে সাফল্য তো এসেছে! জোরদার সাফল্য!

দেবোত্তম নিজে একেবারে সাধারণ। আর পাঁচজনের মতোই।

দেবোত্তম নিজে একেবারে সাধারণ। আর পাঁচজনের মতোই।

পুজোয় এখন আমার দু’বছরের মেয়েই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। পুচকে পুচকে নতুন জামা হয়েছে অনেক। বাড়ির লোকেরা, আত্মীয়রা সবাই দিয়েছেন। আমি আর ওদিকে যাইনি তাই। গল্পের বই কিনে দিয়েছি কয়েকটা। মেয়েটা বই ভালবাসে খুব। আর নিজেকে দিয়েছি সাধের গিটার।
মেয়েকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখতে ইচ্ছে করছে বড্ড। করোনার ভয়ে সাহস পাচ্ছি না। পরের বছর নিশ্চয়ই সুসময় আসবে। বেরিয়ে পড়ব ওকে নিয়ে। এ বার পুজোটা তাই আগের বারের মতোই। বাড়িতেই ছোট্ট একচালার পোড়ামাটির দুর্গার পায়ে অঞ্জলি। বাড়িরই গাছের শিউলি ফুল দিয়ে। আর সঙ্গে জমিয়ে পেটপুজো।

ফুলের কথায় আর একটা গল্প মনে পড়ে গেল। আমি বেড়াতে ভালবাসি খুব। ছুটি পেলেই হল, এক ছুটে বেরিয়ে পড়ি। পুজোয় যদিও কলকাতা ছেড়ে দূরে থাকতে ইচ্ছে করে না মোটেই। তবু নিশ্চিত, ছুটি তো। তাই এক বার পুজোয় ইউরোপে কেটেছিল। আমরা জনা কয়েক বাঙালি দলে। একে অন্যকে নিজেরাই পুজোর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি রোজ। সেই ঘোরাঘুরির মধ্যেই এক দিন দেখি, মাঠ জুড়ে সাদা ফুলের বন। একেবারে আমাদের কাশফুলের মতোই। মনটা কেমন হু হু করে উঠল নিমেষে।

এই যে টান, এই যে পাঁচটা দিন সব ভুলে ভাল থাকা, কাছের মানুষকে জড়িয়ে বাঁচা— এই তো পুজো। আনন্দে ভেসে থাকারও। কোনও খারাপ যেন কাউকে ছুঁতে না পারে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy