এখানকার দুর্গা পুজোর এই বার চার বছর পূর্ণ হবে। আমাদের পুজোর বিশেষত্ব কিন্তু ঘরোয়া পরিবেশে সাবেকি বাঙালিয়ানা বজায় রেখে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিয়ম মেনে মায়ের আরাধনা করা। ছোট বড় সকলে মিলে হই হই করে পুজোর আনন্দ উপভোগ করা। ঠিক যেমনটি দেশে কোনও বনেদি বাড়িতে হয়ে থাকে। স্যান অ্যান্টোনিও বাঙালি কালচারাল কমিটি-র প্রতিটি সদস্য যেন এক পারিবারিক সূত্রে আবদ্ধ।
কিন্তু এই বছর দেশে এবং বিদেশের পরিস্থিতি খুবই সঙ্গীন। প্রত্যেকের মন কেমন যেন ভারাক্রান্ত। মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কেউ হারিয়েছেন তাঁদের স্বজন, কেউ হয়তো হারিয়েছেন জীবিকা, কেউ বা বসত। বিভিন্ন জায়গায় মানুষ গৃহবন্দি হয়ে আছে প্রায় বছরের অর্ধেক সময় ধরে। মন খারাপ করা এক সুর কেমন যেন অনবরত বেজে চলেছে চারিদিকে। এরই মধ্যে পুজোর প্রসঙ্গ ওঠায় শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। শুরুতে, এ বছর পুজো হবে না শুনে মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমরাও তো অপেক্ষা করে থাকি একটি বছর মৃন্ময়ী মা কে চিন্ময়ী রূপে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর জন্য। আজ এই কঠিন পরিস্থিতিতে মা-কে যে আমাদের মাঝে আরও বেশি করে প্রয়োজন।
সেই কারণেই কমিটির বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মায়ের আরাধনার কোনও ত্রূটিই তারা রাখবে না। হয়তো আড়ম্বর অন্যান্য বছরের তুলনায় কম থাকবে, হয়তো মণ্ডপসজ্জা হবে না, কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, করোনা সতর্কতা অবলম্বন করে আয়োজন করা হবে ভার্চুয়াল দুর্গা পুজোর। পঞ্জিকা মেনে চারদিন ধরে দুর্গামায়ের পুজো হবে বেলুড় মঠের নিয়মানুসারে। অনলাইনে আমাদের কমিটির সদস্যরা সরাসরি ঠাকুরমশাইয়ের বাড়ি থেকে পুজো দেখতে পারবেন, অঞ্জলি দিতে পারবেন, যজ্ঞ, সন্ধ্যারতি ও হাজার প্রদীপ চাক্ষুষ উপভোগ করবেন।
মায়ের পুজোর পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছে এক জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। গান, নাচ, আবৃত্তি, নাটক, শ্রুতিনাটকের পাশাপাশি থাকছে ছোটদের ফ্যাশন শো, যেমন খুশি তেমন সাজো, লাইভ আড্ডা, বড়দের ধুনুচি নাচ ইত্যাদি। বাংলা স্কুলের ছেলেমেয়েরা পরিবেশন করবে এক মজার বর্ণপরিচয়, যা লিখেছেন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা। এ সব কিছুর অনুশীলন কিন্তু হয়েছে অনলাইন জুম্ মিটিংয়ে। অত্যন্ত আধুনিক ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে ষ্টুডিও যেখানে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী একে একে এসে ভিডিও অথবা গানের রেকর্ডিং করে গেছেন। সে সব অনুষ্ঠান অনলাইনে দেখানো হবে পুজোর দিনগুলিতে।
সত্যি গর্ববোধ করি আমাদের কমিটির সদস্যদের এই মিলিত প্রয়াসের । এতো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা পেরেছি প্রতিবারের মতো পুজোর আমেজ বজায় রাখতে, মাতৃ আরাধনার চিরাচরিত সংস্কৃতি ধরে রাখতে, সকলের মুখে হাসি ফোটাতে, কয়েক দিনের জন্য সকলকে অনাবিল আনন্দ দিতে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই কঠিন পরিস্থিতি আমরা জয় করবই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy