(বাঁ দিকে) ভ্লাদিমির পুতিন এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র
দু’দিনের সফরে রাশিয়ায় গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম বার সে দেশে পা রাখছেন তিনি। বৃহস্পতিবারই মস্কোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিমান। মোদী মস্কোয় পৌঁছনোর আগেই সে দেশের প্রশাসনিক সদর দফতর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দাবি করেছেন যে, মোদীর রাশিয়া সফরে হিংসায় জ্বলছে পশ্চিমি দুনিয়া। মনে করা হচ্ছে, নাম না করে আমেরিকা এবং তাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোকেই নিশানা করেছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ।
২২তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে মোদীকে সে দেশে আমন্ত্রণ জানান পুতিন। আগেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে তো বটেই, বিবিধ সমসাময়িক আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে কথা হবে। রবিবার মোদী এবং পুতিনের মধ্যে আলোচ্য বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ রাশিয়ার সরকারি সংবাদ চ্যানেল ভিজিটিআরকে-কে বলেন, “এটা (মোদীর) সরকারি সফর। আমরা মনে করি, আলোচ্যসূচির বাইরের বহু বিষয় নিয়েও দুই রাষ্ট্রপ্রধান কথা বলবেন।” রুশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলেও জানান তিনি।
টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে পেশকভকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পশ্চিমি বিশ্ব মোদীর রাশিয়া সফরকে কী ভাবে দেখছে? জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেন, “ওরা হিংসায় জ্বলছে। তার মানে ওরা নিবিড় ভাবে এই সফরের দিকে নজর রাখছে। তাদের এই নজরদারিই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে।”
প্রসঙ্গত, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই আমেরিকা-সহ নেটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি রাশিয়াকে কূটনৈতিক দুনিয়ায় একঘরে করার চেষ্টা করেছে। মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে তাদের উপর একাধিক অর্থনৈতিক অবরোধও জারি করেছে আমেরিকা। যদিও আমেরিকার বারণ সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে নয়াদিল্লি। একই সঙ্গে, গত কয়েক মাসে একাধিক বার পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে মোদী যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। আমেরিকার সঙ্গে নিবিড় কৌশলগত সম্পর্ক রাখলেও পুরনো মিত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে যায়, সরাসরি এমন কোনও সিদ্ধান্তে সায় দেয়নি ভারত। এই আবহেই রাশিয়া সফরে গিয়েছেন মোদী।
সোমবার সকালে রাশিয়ার বিমান ধরার আগে একটি বিবৃতিতে মোদী লেখেন, ‘‘২২ তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে আমি রাশিয়ায় যাচ্ছি। আগামী তিন দিনের মধ্যে আমি অস্ট্রিয়াতেও যাব। ওই দেশে আমার এটাই প্রথম সফর।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘গত ১০ বছরে বাণিজ্য, নিরাপত্তা, শক্তি, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমার বন্ধু পুতিনের সঙ্গে আমি বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং মতামত বিনিময় করব। উদ্দেশ্য একটাই, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এ ছাড়াও এই সফরে আমি রাশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়দের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাব।’’