রাজকীয় প্রাসাদ। অন্দরমহল চোখ ধাঁধানো সব কারুকার্য এবং আসবাবে ঠাসা। মেঝেতে বসানো ঝলমলে ইটালীয় মার্বেল। কৃষ্ণসাগরের উপকূলে গড়ে ওঠা এই প্রাসাদ ঘিরেই এখন টালমাটাল অবস্থা রাশিয়ার।
কেন? রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির দাবি ঘুষের টাকায় তৈরি এই প্রাসাদের মালিক নাকি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন! সম্প্রতি এ নিয়ে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন নাভালনি। তার পরই তেতে উঠেছে সারা দেশ।
সত্যিই কী তা হলে এটা ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি’র ছবি? এর সঠিক উত্তর এখনও অজানা। নাভালনি এবং পুতিন একে অপরের উপর দায় ঠেলেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে তো এত বড় প্রাসাদ গজিয়ে ওঠেনি। দীর্ঘ দিন ধরেই তার কাজ চলেছে। তা হলে হঠাৎ এত দিন পরই বা কেন এই ‘দুর্নীতি’ প্রকাশ করতে গেলেন নাভালনি?
গত অগস্টে সাইবেরিয়া থেকে মস্কো যাওয়ার পথে বিমানেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনি।
অভিযোগ ওঠে বিষে দিয়ে তাঁকে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ফেডেরাল সিকিউরিটি সার্ভিস-এর বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনি।
সোভিয়েত আমলে তৈরি নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগ করা হয়েছিল তাঁর উপরে। এমনই দাবি তাঁর।
এই কারণে দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন নাভালনি। গত ১৭ জানুয়ারি সুস্থ হয়ে জার্মানি থেকে দেশ ফেরা মাত্রই তাঁকে গ্রেফতার করে রুশ পুলিশ। এর দু’দিন পরই একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন নাভালনি।
সম্প্রতি নাভালনির মুক্তির দাবিতে এবং তাঁর প্রকাশ করা ওই বিস্ফোরক ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে উত্তাল হযে উঠেছে রাশিয়া। প্রশাসনের বিরুদ্ধে এত বড় আন্দোলন হয়তো রাশিয়া আগে দেখেনি। কী ছিল ওই ভিডিয়োতে?
ভিডিয়োর বিষয়বস্তু শুধু রাশিয়াই নয় সারা বিশ্ববাসীকেই বিস্মিত করে তুলেছিল। ভিডিয়োর বিষয়বস্তু ছিল ‘পুতিন প্যালেস’, অর্থাৎ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাজপ্রাসাদ।
এই প্রাসাদ নাকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতির প্রতীক। যা নাকি পুরোটাই ঘুষের টাকায় তৈরি! ভিডিয়োয় এমনই দাবি করেন নাভালনি।
এই ভিডিয়ো সামনে আসার পরই তোলপাড় শুরু হয় বিশ্ব জুড়ে। নাভালনির দাবি, রাশিয়ার ক্রাসনোদরের কাছে গেলেন্দঝিক নামে শহরে রয়েছে এই প্রাসাদ। যা তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৩৫ কোটি ডলার।
তাঁর আরও দাবি, পুতিনের ঘনিষ্ঠ লোকজন ঘুষের টাকা দিয়ে পুতিনের জন্য এই প্রাসাদ বানিয়ে দিয়েছেন। পুতিনই নাকি এই প্রাসাদের একমাত্র মালিক।
১৭ হাজার ৬৯১ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে প্রাসাদটি। ক্যাসিনো, আঙুরের খেত থেকে শুরু করে গির্জা, এমনকি নিজস্ব বন্দরও রয়েছে প্রাসাদে। যেন একটি আলাদা শহর এই প্রাসাদ। ভিডিয়োর এমনই দাবি করেন নাভালনি।
প্রাসাদের হেলিপ্যাডের ঠিক পাশেই ছোট সবুজে ঘেরা পাহাড়ের মতো দেখতে অংশের নীচে রয়েছে আইস হকি রিঙ্ক। গত ১৫ বছর ধরে তৈরি হচ্ছে প্রাসাদটি। এখনও সম্পূর্ণ হতে অনেক কাজ বাকি।
এই প্রাসাদের উপর দিয়ে কোনও বিমান যাতায়াতের অনুমতি নেই। এমনকি যে কোনও জলযানকে প্রাসাদ থেকে অন্তত ৮ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে। ভিডিয়োয় দাবি করেন নাভালনি।
রাশিয়ার ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় ভিডিয়ো নিয়ে। পুতিন বিরোধীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হন। যদিও নাভালনির সমস্ত দাবিই খণ্ডন করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
ইতিমধ্যেই এক বিবৃতিতে পুতিন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, এই প্রাসাদ এবং প্রাসাদের কোনও কিছুই তাঁর নিজের বা দূর সম্পর্কের কোনও আত্মীয়েরও নয়।
সম্প্রতি আবার পুতিন ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাশিয়ার এক কোটিপতি ব্যবসায়ী রটেনবার্গ বিবৃতি দিয়ে বিতর্কের মূলে থাকা ওই প্রাসাদ তাঁর বলে দাবি করেছেন।
তিনি আরও দাবি করেন, আর কয়েক বছরের মধ্যে প্রাসাদের কাজ সম্পূর্ণ হবে। তখন এটিকে বিলাসবহুল হোটেলে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তবে এই দাবিতেও পুতিন বিরোধীদের চুপ করানো যায়নি। দুর্নীতির প্রতিবাদে এখনও সোচ্চার তাঁরা।