প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে পুনঃপ্রবেশ হতে চলেছে তাঁর। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই চেনা মেজাজে ফিরেছেন ট্রাম্প। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে হইচই ফেলেছেন তিনি।
এ বার পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ইমরান খানের সমর্থনে স্বর চড়ালেন তাঁর মনোনীত বিশেষ দূত। এমনকি, ইমরানকে জেল থেকে মুক্তির দাবিও তুলেছেন ট্রাম্প মনোনীত আমেরিকার ওই হবু বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেল।
জার্মানিতে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ছিলেন গ্রেনেল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার পর তাঁকে বিশেষ দূত (ইউএস এনভয় ফর স্পেশ্যাল মিশন) হিসাবে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প।
সেই গ্রেনেলকেই ইমরানের সমর্থনে গলা ফাটাতে দেখা গিয়েছে। গ্রেনেলের দাবি, বর্তমান পাক সরকার ইমরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। ইমরানকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
যদিও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, গ্রেনেল ইমরানের জেলমুক্তির দাবি তুললেও সেই কথাগুলি গ্রেনেলের মুখে বসিয়েছেন ট্রাম্পই।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে গ্রেনেল বলেছেন, ‘‘আমি ইমরান খানকে কারাগার থেকে মুক্ত হতে দেখতে চাই। ইমরান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো তাঁর বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগ তোলা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল তাঁকে কারাগারে বন্দি রেখেছে। দুর্নীতি করে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল।’’
ট্রাম্প এবং ইমরানের মধ্যে মিল খোঁজারও চেষ্টা করেছেন গ্রেনেল। তিনি মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প এবং ইমরান— উভয়ের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগই ‘রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
বুধবার আমেরিকার সংবাদমাধ্যম নিউজ়ম্যাক্সকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইমরানকে নিয়ে ওই মন্তব্য করেন গ্রেনেল। একই সঙ্গে প্রথম ট্রাম্প জমানায় আমেরিকা এবং পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘উন্নতি’র জন্য ইমারনের প্রশংসাও করতে শোনা গিয়েছে গ্রেনেল। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ) প্রধান ক্ষমতায় থাকাকালীন দুই দেশের সম্পর্ক বিকশিত হয়েছিল।
ইমরান পাক ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন এক সময়। সারা জীবন মেতে ছিলেন খেলা নিয়েই। সেই অর্থে পাকিস্তানের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন বহিরাগত। গ্রেনেলের দাবি, ট্রাম্পও প্রথাগত রাজনীতিতে বহিরাগত। আর সে দিক থেকেই দুই নেতাকে মিলিয়েছেন গ্রেনেল।
গ্রেনেলের কথায়, ‘‘ট্রাম্প প্রশাসনের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের অনেক ভাল সম্পর্ক ছিল। ইমরান খান তখন পাকিস্তানের নেতা। এর কারণ ইমরান রাজনীতিতে বহিরাগত ছিলেন। তিনি একজন প্রাক্তন ক্রিকেট খেলোয়াড় এবং আসলে পাক জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি এক জন রাজনীতিকের মতো কথা বলতেন না। খুব সাধারণ ভাষায় কথা বলতেন। আর তাই ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর খুব ভাল সম্পর্ক ছিল।’’
এর আগে মঙ্গলবারও আমেরিকা স্টেট ডিপার্টমেন্টের বর্তমান মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের সঙ্গে এক্স হ্যান্ডলে কথোপকথনের সময় পিটিআই নেতার মুক্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন গ্রেনেল।
ম্যাথুর নিন্দা করে গ্রেনেল বলেন, ‘‘সেনা আদালতে পাকিস্তানি সাধারণ নাগরিকদের শাস্তি দেওয়া নিয়ে আমেরিকা অনেক দেরিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আমেরিকার প্রচেষ্টা খুব সামান্য এবং দুর্বল।’’ তখনই ইমরানের মুক্তির দাবিতে সরব হতে দেখা যায় ট্রাম্পের আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত গ্রেনেল।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে মাঝেমধ্যেই সুর চড়াতে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্পকে। সম্প্রতি কানাডা, পানামাকে ‘হুমকি’ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রিনল্যান্ডকে কিনে নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। আবার অনেক বন্ধুকে সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন। সেই আবহেই এ বার ইমরানের পাশে দাঁড়ালেন তাঁর মনোনীত বিশেষ দূত।
উল্লেখ্য, ক্রিকেট দলের অধিনায়ক থেকে পাক রাজনীতির আঙিনায় পা দেওয়া ইমরান রাজনীতিবিদ হিসাবে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ২০১৮ সালে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন তিনি।
২০২২ সালে পাক আইনসভায় অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমে। পরে গ্রেফতারও হন।
২০২৩ সালের অগস্ট থেকে জেলবন্দি ইমরান। তবে তাঁর সমর্থকদের দাবি, ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। পাক জনগণ এবং রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে জোর করে কারাবন্দি করা হয়েছে তাঁকে।
সম্প্রতি কারাবন্দি অবস্থাতেই রাজধানী ইসলামাবাদ-সহ পাকিস্তানের বড় শহরগুলি জুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা পিটিআই প্রধান।