অবসরের পর কী ভাবে কাটবে জীবন? কোথা থেকে মিলবে সংসার চালানোর খরচ? এই চিন্তা অহরহ কুরে কুরে খায় মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের। আর তাই কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নির রেওয়াজ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে অনেকেই খুব অল্প বয়স থেকে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। অবসরের পর বেশি লাভের সুযোগ থাকে তাঁদের।
এ দেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় হল ‘পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড’ বা পিপিএফ এবং ‘ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম’ (এনপিএস)। দু’টিতেই ভাল টাকা রিটার্ন পেতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। লগ্নিকারীদের প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে পিপিএফ এবং এনপিএস বড় ভূমিকা নিতে পারে। দু’টি প্রকল্পের মধ্যে কোনটি বেশি লাভজনক, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত পিপিএফে লম্বা সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে হয়। এতে রয়েছে নিশ্চিত রিটার্নের সুবিধা। অর্থাৎ, পিপিএফে বিনিয়োগ বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ নয়। দ্বিতীয়ত, পিপিএফ থেকে প্রাপ্ত সুদে রয়েছে আয়কর ছাড়। ঝুঁকিবিহীন লগ্নি করতে চাইলে এতে টাকা রেখে লাভবান হওয়ার দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে।
বর্তমানে পিপিএফের লগ্নিতে বছরে ৭.১ শতাংশ করে সুদ দিচ্ছে সরকার। প্রতি ত্রৈমাসিকে এই সুদের হার পর্যালোচনা করে কেন্দ্র। ফলে আগামী দিনে সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পিপিএফে ১৫ বছরের জন্য লগ্নি করতে হয়। মেয়াদ ফুরোলে আরও পাঁচ বছর করে বিনিয়োগের সুযোগ মেলে।
ন্যূনতম ৫০০ টাকা দিয়ে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন গ্রাহক। একটি আর্থিক বছরে এতে সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। আয়কর আইনের ৮০সি ধারা অনুযায়ী, দেড় লক্ষ টাকা লগ্নির উপরেও কোনও কর দিতে হবে না গ্রাহককে। পিপিএফের সুদ থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপরেও নেই কোনও কর।
আর্থিক পরামর্শদাতাদের মতে, কম আয়ের ব্যক্তিরা ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের জন্য পিপিএফকে বেছে নিতে পারেন। কারণ, বছরে মাত্র ৫০০ টাকা করে রাখলেও চালু থাকবে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট। তা ছাড়া এই প্রকল্পে নিশ্চিত রিটার্ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে লোকসানের কোন আশঙ্কাই নেই।
অন্য দিকে, অবসরের পর আয়ের কথা মাথায় রেখে এনপিএস চালু করেছে কেন্দ্র। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি পেনশন প্রকল্প। এনপিএসের বিনিয়োগ শেয়ার বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে পিপিএফের থেকে এটি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এতে লগ্নি করলে অবসরের পর মোটা টাকা হাতে আসার সুযোগ রয়েছে।
এনপিএসে বিনিয়োগের রিটার্ন বাজারের ওঠাপড়ার উপর নির্ভরশীল। ঐতিহাসিক গত ভাবে এতে গড়ে আট থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। ৬০ বছর পর্যন্ত এনপিএসের বিনিয়োগকারীকে এতে লগ্নি করেই যেতে হবে। তবে ৭০ বছর পর্যন্ত এই তহবিল বাড়ানোর সুযোগ পাবেন তিনি।
পিপিএফের মতো এনপিএসে লগ্নির কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। অর্থাৎ, গ্রাহক এতে ইচ্ছামতো টাকা রাখতে পারেন। কিন্তু, প্রতি অর্থবর্ষে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড় পাবেন তিনি। এর অতিরিক্ত টাকা এনপিএস তহবিলে জমা করলে আয়করের ক্ষেত্রে কোনও ছাড় মিলবে না।
এনপিএসের কর ছাড়ের বিষয়টি আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় বলা রয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, গ্রাহক দেড় লক্ষ টাকা সরাসরি কর ছাড় পাবেন। এ ছাড়া ৮০সিসিডি(১বি) ধারা অনুযায়ী আরও ৫০ হাজার টাকা ছাড় পাবেন তিনি। সব মিলিয়ে মোট ছাড়ের পরিমাণ দাঁড়াবে দু’লক্ষ টাকা।
বিশেষ পরিস্থিতিতে এনপিএস তহবিল থেকে আংশিক টাকা তুলতে পারবেন গ্রাহক। অবসরের পর ৬০ শতাংশ টাকা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। এই অর্থ পুরোপুরি কর মুক্ত। বাকি ৪০ শতাংশ টাকায় অবশ্যই তাঁকে অ্যানুইটি কিনতে হবে।
এনপিএসের বিনিয়োগ বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ হলেও অনেক বেশি রিটার্ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রথাগত স্থায়ী আমানতের থেকে এটি অনেক বেশি আকর্ষণীয় প্রকল্প। আর্থিক পরামর্শদাতাদের কথায়, রোজগার কিছুটা বেশি হলে ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের জন্য এনপিএসকে বেছে নিতে পারেন গ্রাহক। এ ছাড়া লগ্নিতে বৈচিত্র আনতে চাইলে এতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
তবে ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা না থাকলে এনপিএসে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। রক্ষণশীল লগ্নিকারীদের ক্ষেত্রে পিপিএফ অত্যন্ত ভাল একটি প্রকল্প। এনপিএসকে ঠিক এর উল্টো বলা যেতে পারে। দু’টি ক্ষেত্রেই আয়করের ৮০সি ধারা অনুযায়ী কর ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এনপিএসে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা কর ছাড় পেয়ে থাকেন গ্রাহক।
একটি নির্দিষ্ট সময় পর পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে আংশিক সঞ্চয় তুলে নিতে পারেন গ্রাহক। এই তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগও পাবেন তিনি। অন্য দিকে, একমাত্র বিশেষ প্রয়োজনেই এনপিএস তহবিল থেকে আংশিক অর্থ প্রত্যাহার করতে পারেন গ্রাহক। অবসরের পরও এনপিএসের পুরো টাকা তোলা যায় না। এই তহবিলের ৬০ শতাংশ অর্থ হাতে পেতে পারেন গ্রাহক।
ন্যূনতম ১৫ বছরের জন্য পিপিএফে বিনিয়োগ করতে হয়। এনপিএসে লগ্নির সময়সীমা ৬০ বছর পর্যন্ত। এতে বিনিয়োগের সময় বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। পিপিএফে লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা একটি অর্থবর্ষে দেড় লক্ষ টাকা রেখেছে সরকার। আর এনপিএসে বিনিয়োগের কোনও ঊর্ধ্বসীমা না থাকায় এতে ইচ্ছামতো টাকা রাখতে পারেন গ্রাহক।