দু’দশক আগে আফগানিস্তানে তালিবান শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল আমেরিকা। তার পরে গত কুড়ি বছর ধরে, সে দেশের নিরাপত্তা অনেকটাই সামলেছে আমেরিকান সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটি যে আদপেই তালিবানমুক্ত হয়নি, উল্টে এখন সুযোগ পেয়ে তালিবানই যে আফগান বাহিনীকে প্যাঁচে ফেলে দিচ্ছে, তা এখন মেনে নিচ্ছেন আমেরিকার ‘জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ’-এর চেয়ারম্যান মার্ক মাইলি।
বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে মাইলি জানান, আফগানিস্তানের ৪০০টি প্রদেশের অর্ধেকেরও বেশি এখন তালিবানের দখলে। তবে তাঁর কথায়, ‘‘আশার কথা এই যে, সে দেশের কোনও বড় শহরের দখল তালিবান এখনও নিতে পারেনি। আফগান বাহিনী আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে এই সব বড় শহরে ঘাঁটি আরও শক্ত করে তারা প্রাদেশিক অঞ্চলগুলিতে তালিবানের উপরে হামলা চালাতে পারে।’’ মাইলির মতে, ‘‘দেশের জনসংখ্যা মূলত রাজধানী কাবুল ও অন্যান্য বড় শহরেই ছড়ানো। তাই আফগান সেনাবাহিনী এখন সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে দেশের সাধারণ মানুষের উপরে তালিবান হামলার কোনও আঁচ না লাগে।’’ অস্ত্রশস্ত্র ও লোকবলে আফগান বাহিনীর থেকে তালিবান বাহিনী বেশি শক্তিশালী হলেও মাইলির দাবি, ‘‘শুধু সৈন্য আর বন্দুকের সংখ্যা দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না। জয়ের জন্য যেটা সব চেয়ে দরকার, তা হল—মনোবল। যেটা আফগান বাহিনীর ভালই রয়েছে। ফলে আমরা যেন আগে থেকেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে না যাই যে, আফগানিস্তান তালিবানের দখলে চলে গিয়েছে।’’ দিন কয়েক আগে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-ও বলেছিলেন, ‘‘এই যুদ্ধে তালিবানেরই জয় হবে, তা এখন থেকে ধরে নেওয়া উচিত নয়।’’ তবে একই সঙ্গে বাইডেন এ-ও বলেছিলেন, ‘‘তালিবানের বিরুদ্ধে জিততে গেলে আফগানিস্তানের বিভিন্ন গণতন্ত্রকামী শক্তিকে এক হয়ে লড়তে হবে। এই মুহূর্তে দেশে কোনও একটি দলের পক্ষে সরকার গড়া সম্ভব নয়, সেটা ওদের বোঝা দরকার।’’
আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নিলেও আমেরিকা তাদের সামরিক সাহায্য দিয়ে যাবে বলে আজ জানিয়েছেন আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। তিনি জানান, আজ আফগান বাহিনীর হাতে তিনটি অত্যাধুনিক ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার তুলে দিয়েছে আমেরিকা। অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশ কিছু সামরিক সরঞ্জাম কাবুলকে দেওয়া হবে। কাবুলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে তারা সব রকম সাহায্য করে যাবে বলে আজ বিদেশ মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে নয়াদিল্লিও।