বাগরাম ছাড়ল আমেরিকান সেনা ছবি রয়টার্স।
ক্ষমতায় আসার পর পরই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তানের মাটি থেকে আমেরিকান সেনা ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথা মতো ইতিমধ্যেই গত কয়েক মাসে আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল জার্মানি, ইটালির মতো দেশ। এ বার আফগানিস্তানের বৃহত্তম বায়ুসেনা ঘাঁটি বাগরাম থেকে আমেরিকা ও ন্যাটো বাহিনী নিজেদের সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিল। আজ এ কথা জানিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ফাওয়াদ আমান।
যার মূল অর্থ, আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার যাবতীয় দায়ভার ফের পড়তে চলেছে আফগান সেনার উপরে। বাগরামের ঘাঁটি এর পর থেকে আফগান সেনা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে কি না, তার উপরেই নির্ভর করবে আগামী দিনে আফগানিস্তানে আদৌ শান্তি বজায় থাকে কি না।
৯/১১-র হামলার পর থেকে প্রায় দু’দশক বিদেশি সেনা মোতায়েন ছিল আফগানিস্তানের মাটিতে। আমেরিকা, জার্মানি, ইটালি, ব্রিটেন, তুরস্কের প্রায় দশ হাজার সেনা এত দিন আফগান মানুষের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে ছিল। কিন্তু বাইডেন বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহারের কথা জানানোর পর থেকেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন জেলায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে শুরু করেছে তালিবান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই চারশোটির মধ্যে একশোটি জেলা তালিবানের দখলে চলে গিয়েছে। তাদের মুখপাত্র আজ বাগরাম থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। তালিবানের বক্তব্য, এর ফলে দেশের সাধরাণ মানুষ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারিত করতে পারবেন।
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি ভাবে বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা ন্যাটোর। কিন্তু তাদের এ ভাবে বাগরাম ছেড়ে চলে যাওয়াকে আদৌ মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় মানুষ। মাতিউল্লা নামে এক স্থানীয় জুতোর দোকানের মালিক যেমন বললেন, ‘‘এখানকার পরিস্থিতি এখন থেকেই ভয়াবহ হতে শুরু করেছে। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্রই নেই তালিবানকে মোকাবিলা করার।’’
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারাই অনেকে অস্ত্র হাতে তুলে তালিবানকে প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করছেন। কাবুলের উত্তরে পারওয়ান প্রদেশে যেমন সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলেছেন দোস্ত মহম্মদ সালাঙ্গি। বছর পঞ্চান্নর সালাঙ্গি স্পষ্টই বলছেন, ‘‘তালিবানের অত্যাচার ঠেকাতে প্রয়োজনে আমাদের পরিবারের সাত বছরের শিশুর হাতেও অস্ত্র তুলে দিতে রাজি আছি। কিন্তু ওদের কোনও মতেই আর আমাদের দেশে রাজত্ব করতে দেওয়া যাবে না।’’ পারওয়ানেরই আর এক বাসিন্দা, ফারিদ মহম্মদ নামে এক ছাত্র বললেন, ‘‘আমাদের দেশকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। বিদেশি সেনা আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’ তবে আপাতত কাবুলে নিজেদের কূটনৈতিক ভবনগুলো রক্ষায় কমপক্ষে ৬০০ আমেরিকান সেনা সেখানে রাখার কথা ভেবে রেখেছে বাইডেন প্রশাসন।