তীরথ সিংহ রাওয়াত। ফাইল চিত্র।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চার মাসের মধ্যেই তীরথ সিংহ রাওয়াত ইস্তফা দিতে পারেন বলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছিল রাজধানীর রাজনীতিতে। অবশেষে শুক্রবার রাতেই ইস্তফা দিলেন তিনি। অনেকে অবশ্য বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নৈতিকতার প্রশ্নে অস্বস্তিতে ফেলতেই তীরথকে সরানোর সিদ্ধান্ত বিজেপি নেতৃত্বের।
দু’য়ের মধ্যে যোগসূত্র কোথায়?
তীরথ এবং মমতা— দু’জনে উত্তরাখণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হলেও বিধানসভা ভোটে জিতে আসেননি। মার্চে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে লোকসভার সাংসদ ছিলেন তীরথ। আর রাজ্যে দলকে জিতিয়েও মমতা নিজে নন্দীগ্রামে হেরেছেন শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। নিয়ম হল, বিধানসভায় জিতে না-এসে রাজ্যের কর্ণধার হলে, উপনির্বাচনে জিতে আসতে হবে ছ’মাসের মধ্যে। কিন্তু ‘কোভিডের কারণে’ দেশে এই মুহূর্তে ভোট করাতে দ্বিধাগ্রস্ত নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই সুযোগে তীরথকে সরিয়ে পরোক্ষে মমতার উদ্দেশ্যে বার্তা দিতে চাইছে বিজেপি।
এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর মুখ্যমন্ত্রী হওয়াই উচিত নয়। কিন্তু মমতা হয়েছেন। যে হেতু উত্তরাখণ্ডে এখন ভোট হওয়া কঠিন, তাই আদর্শের কথা মাথায় রেখে দল তীরথকে সরিয়ে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করার কথা ভাবছে। তেমনই মমতারও উচিত নৈতিকতার কারণে আপাতত সরে যাওয়া।’’
তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের বক্তব্য, ‘‘দুই রাজ্যের পরিস্থিতির তুলনাই চলে না। উত্তরাখণ্ডে আগামী বছরের গোড়াতেই ভোট। তাই এত কম সময়ের জন্য এই করোনা আবহে উপনির্বাচন করায় অনীহা থাকতে পারে। কিন্তু সদ্য মে-তেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। তাই সেখানে উপনির্বাচন না-করার যুক্তি নেই।’’ কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ পুরোদস্তুর থাকাকালীন বিধানসভা ভোট করানো গেলে, এখন ভবানীপুর (যেখানে মমতার প্রার্থী হওয়ার কথা)-সহ কয়েকটি কেন্দ্রে কেন উপনির্বাচন করানো যাবে না, প্রশ্ন তৃণমূলের। দ্রুত তা সেরে ফেলতে সম্প্রতি কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন মমতা নিজেও।
এ দিনই রাজ্যের রাজ্যসভা আসনে নির্বাচন করার জন্য নবান্নকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। মমতা জানান, রাজ্যসভার নির্বাচন করাতে আপত্তি নেই। কিন্তু করোনার প্রকোপ তুলনায় কম থাকার এই সময়ে উপনির্বাচনও সেরে ফেলার পক্ষপাতী তিনি। আজ লিখিত ভাবে তা কমিশনকে জানিয়েওছেন।
ইস্তফার পরে তীরথ বলেছেন, ‘‘করোনার কারণে এখন উপনির্বাচন সম্ভব নয়। সাংবিধানিক সঙ্কট হতে পারে, সে কথা মাথায় রেখে নৈতিক কারণে ইস্তফা দিয়েছি।’’
নৈতিকতার কথা বললেও, সূত্রের মতে, তীরথকে সরানোর কারণ আলাদা। দলের অভ্যন্তরীণ বিবাদ থামাতে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। তাতে তিনি ব্যর্থ। তাই ভোটের আগে তাঁকে সরানোর কথা ভাবছিল দল।
একে এপ্রিল-মে মাসে করোনার বাড়বাড়ন্তের সময়ে ভোট করে হাত পুড়েছে। তার উপরে এখন কমিশনের পুরো বেঞ্চ আসন পুনর্বিন্যাসের কাজে জম্মু-কাশ্মীরে। ১০ জুলাই ফেরার কথা। তার আগে উপনির্বাচনের ঘোষণা কঠিন। এই সব দিক বিবেচনা করেই সৎপাল মহারাজ বা ধন সিংহ রাওয়াতের মতো কোনও নেতাকে উত্তরাখণ্ডের মসনদে বসানোর পরিকল্পনা করছে বিজেপি। এতে ভোটের আগে নতুন মুখ তুলে ধরা যাবে। নৈতিকতার আক্রমণ শানানো যাবে মমতাকে লক্ষ্য করেও।
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, উপনির্বাচনে জিতে আসতে মমতার হাতে নভেম্বর পর্যন্ত সময় রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গে উপনির্বাচন না-করালে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ইতিমধ্যেই তৃণমূল প্রশ্ন তুলছে, বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে কমিশন ভোটে গড়মসি করছে। ফলে উপনির্বাচন দ্রুত সেরে ফেলার চাপ কমিশনের উপরে ক্রমশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা।