উত্তর গাজ়ায় নিহত হয়েছেন ইজ়রায়েলি সেনা চিকিৎসক শে আরাভাস। তাঁর শেষকৃত্য ইজ়রায়েলি সেনারা। বৃহস্পতিবার হোলনে। ছবি: রয়টার্স।
‘চোখের সামনে মৃত্যু দেখেছি, আমরা মানুষ। আমাদের জন্তু ভাববেন না, যেতে দিন আমাদের।’— সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে নিজের মিশরীয় পাসপোর্টটি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মহিলা। পাশে তাঁর মেয়ের চোখেও জল। তাঁর মতো রাফা সীমান্ত দিয়ে মিশরে প্রবেশের অপেক্ষায় আরও বহু মানুষ। হামাস-ইজ়রায়েল সংঘর্ষে প্রাণ হাতে করে নিজের ঘরে ফিরতে চাইছেন যাঁরা।
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় বারের জন্য খোলা হয়েছিল রাফা সীমান্ত। কাতারের মধ্যস্থতায় ইজ়রায়েল, মিশর, আমেরিকা ও হামাসের মধ্যে এই চুক্তি হয় যে অন্য দেশের নাগরিক যাঁরা গাজ়ায় আটকে পড়েছেন তাঁদের মিশরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে গুরুতর জখম গাজ়ার বাসিন্দাদের। সেই প্রেক্ষিতেই আজ সীমান্ত খোলা হয়। তবে, খুব অল্প সংখ্যক মানুষই ছাড় পেয়েছেন। বাকিরা ক্লান্ত ভাবে ফিরে গিয়েছেন অপেক্ষায়, চার সপ্তাহ ধরে যা চলছে।
এ দিকে, সাধারণ প্যালেস্টাইনিদের মৃত্যুমিছিল অব্যাহত গাজ়া ভূখণ্ডে। মোট মৃত্যু সংখ্যা এখন ন’হাজার পার। বৃহস্পতিবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন মানবতার খাতিরে যুদ্ধে একটি সাময়িক বিরতি প্রয়োজন। অন্তত, যারা হামাসের হাতে বন্দি তাদের উদ্ধার করার জন্য প্রয়োজন। পরে হোয়াইট হাউসের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, গাজ়ায় যুদ্ধবন্দি, বিশেষ করে দুই আমেরিকান-ইজ়রায়েলি পণবন্দি নাতালি ও জুডিথ রানানের মুক্তির কথা ভেবেই এই কথা বলা।
তবে, কড়া প্রতিরোধের মুখে এখনও পর্যন্ত গাজ়া ভূখণ্ডের বৃহত্তম এলাকা গাজ়া শহরে পুরোপুরি প্রবেশ করতে পারেনি ইজ়রায়েলি সেনা। মাটির নীচের প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত অজস্র সুড়ঙ্গে নিজেদের বাঙ্কার বানিয়েছে হামাসের বাহিনী, সঙ্গে রয়েছে প্যালেস্টাইনি ইসলামিক জিহাদ বাহিনীর সদস্যেরাও। সেখান থেকেই চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে তারা। ফলে, আকাশহানা কার্যত বিফলে যাচ্ছে ইজ়রায়েলের। এ দিন তাঁদের এক অভিজ্ঞ সেনানায়ককে হারিয়েছে তারা।
হামাসের চোরাগোপ্তা হামলার মোকাবিলা করতে বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে ইজ়রায়েল। ‘স্পঞ্জ বম্ব’ নামের এক বিশেষবোমার সাহায্যে সুড়ঙ্গ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। নামানো হয়েছে ড্রোন। এর পাশাপাশি, ‘স্টিং ডগ’ অপারেশন শুরু হয়েছে। অর্থাৎ, যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষিত কুকুর ও তার প্রশিক্ষক সেনা এক যোগে হানা দিচ্ছে সুড়ঙ্গে। তবে, এই কুকুরগুলি শুধু হামলা নয়, উদ্ধারেও পারদর্শী। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, অক্টোবরের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০ ইজ়রায়েলিকে উদ্ধার করেছে তারা।