ব্যতিক্রমী উহান। নববর্ষ উদ্যাপনে রাস্তায় মানুষের ঢল। রয়টার্স
একুশে বিশের ‘বিষ’ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় গোটা পৃথিবী। বর্ষবরণের অপেক্ষায় প্রায় মুখিয়ে। তবে বছর শেষের উৎসবের সেই চেনা চেহারাটা উধাও। সিডনি হোক বা প্যারিস, কিংবা ম্যানহাটনের টাইমস স্কোয়ার, জনমানবহীন রাস্তাঘাট। ঘরবন্দি মানুষ।
ইউরোপের প্রায় সব দেশেই ফাইজ়ার-বায়োএনটেকের সম্ভাব্য টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ব্রিটেনে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকা চ্যাডক্স১-কেও জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে গত কাল। টিকাকরণ শুরু হবে ৪ জানুয়ারি। ও দিকে, ফাইজ়ার ও মডার্নার প্রতিষেধককে ছাড়পত্র দিয়েছে আমেরিকা। সেখানেও টিকাকরণ শুরু হয়েছে। যদিও সংক্রমণ-হার কমার কোনও লক্ষণ নেই ইউরোপ-আমেরিকায়। এশিয়ায় গত কাল প্রথম ফাইজ়ারের টিকা দেওয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরে। চিন বহু দিন হল বাসিন্দাদের দেশজ ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। যদিও সেই টিকা সংক্রান্ত কোনও নথিপত্র তারা প্রকাশ করেনি। রাশিয়া একই পথে হেঁটে দেশে তৈরি স্পুটনিক-ভি টিকা বাসিন্দাদের প্রয়োগ করা শুরু করে দিয়েছে।
প্রতি বছর আকাশবাজির রোশনাইয়ে সর্বপ্রথম বর্ষবরণ করে সিডনি। তার সাক্ষী হতে মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। এ বারেও সেই আকাশবাজির অনুষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকজন জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কেউ তা সামনে থেকে দেখতে যেতে পারেননি। অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো লিঙ্ক প্রকাশ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তা ছাড়া টেলিভিশনেও দেখানো হয়েছে। বাড়িতে বসেই সেই অনুষ্ঠান দেখেছেন লোকজন। নিউ সাউথ ওয়েলস-এর প্রিমিয়ার গ্ল্যাডিস বেরেজিকলিয়ান বলেন, ‘‘বর্ষবরণের রাতে আমরা কোনও ‘সুপার-স্প্রেডার’ অনুষ্ঠান করতে চাই না।’’
জাপানে প্রতি বছর সম্রাট নারুহিতো ও রাজপরিবারের সদস্যেরা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষকে শুভেচ্ছা জানান। এ বছর সেই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। ব্যতিক্রম একমাত্র নিউজ়িল্যান্ড। এই দেশ করোনা-মুক্ত হয়ে গেলেও সব রকম কড়াকড়ি বজায় রয়েছে। শুধু বর্ষবরণের অনুষ্ঠান প্রতি বছরের মতো এ বারেও হবে।
নয়া ‘ব্রিটেন-স্ট্রেন’-এর ভয়ে ঘরবন্দি ইউরোপ। বছর শেষের রাতে সরকারি নিষেধ উড়িয়ে লোকজন যাতে পার্টি করতে না-পারে, তা দেখার জন্য রাস্তায় ১ লক্ষ পুলিশ-কর্মী নামিয়েছে ফরাসি প্রশাসন। রাতে কার্ফু জারি করা হয়েছে দিকে-দিকে। প্যারিসে সন্ধে থেকে মেট্রো পরিষেবা অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। বার, রেস্তারাঁ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এ বছরের মতো বন্ধ। ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বুধবার বলেন, ‘‘বাড়ির বাইরে কারও সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করবেন না।’’ জার্মানিতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন চলবে। বাজি বেচাকেনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে জার্মান সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেন্স স্প্যান বলেন, ‘‘স্মরণকালে এমন নিঝুম বর্ষবরণের রাত দেখিনি।’’
আমেরিকার চেনা চেহারাও উধাও। সান ফ্রান্সিসকো ও লস অ্যাঞ্জেলেসে বাজির অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। টাইমস স্কোয়ারে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আমেরিকারই। সাড়ে ৩ লক্ষ মৃত্যু। ২ কোটির উপরে সংক্রমণ। বুধবার এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩৭৪৪ জনের। মঙ্গলবার মারা যান ৩৭২৫ জন। পরপর দু’দিন রেকর্ড সংখ্যক প্রাণহানি। গত কাল এক দিনে সংক্রমিত হয়েছে ২ লক্ষ ২৯ হাজার মানুষ। পরিস্থিতি সামলাতে ট্রায়াল সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ফাইজ়ারের পাশাপাশি মডার্নার সম্ভাব্য টিকাকে ছাড়পত্র দিয়েছে সরকার। মডার্নার টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে আজ। ৯৪.১ শতাংশ কার্যকারিতা দাবি করেছেন গবেষকেরা। ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত হয়েছে রিপোর্টটি।