জাইর বোলসোনারোর সমর্থকদের বিক্ষোভ রুখতে ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার রাস্তায় সেনা প্রহরা। বিক্ষোভ চলছে সোমবার থেকে। রয়টার্স।
ঠিক যেন ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ঘটনা! তফাত এটাই, সে দিন আমেরিকার ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছিল তৎকালীন পরাজিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। আর সোমবার ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্পের ‘মিত্র’ অতি-দক্ষিণপন্থী বলে পরিচিত জাইর বোলসোনারোর সমর্থকেরা।
দুই দলের দাবি অবশ্য একই, তাদের প্রেসিডেন্টকে চক্রান্ত করে হারানো হয়েছে। রবিবার ব্রাজিলের ফেডেরাল ইলেক্টোরাল কোর্ট লুলার হাতে নির্বাচন জয়ের শংসাপত্র তুলে দিতেই সোমবার ব্রাসিলিয়ার শহর জুড়ে অশান্তির আগুন। লুলার জয় নিয়ে প্রতিবাদে সরব হওয়ার পাশাপাশি জাইর-সমর্থকদের দাবি সেনা অভ্যুত্থানেরও। তাদের মতে, কারচুপি করে বোলসোনারোকে হারানো হয়েছে। তাই দেশের ভালর জন্য এখন সেনা অভ্যুত্থানই এক মাত্র পথ। জানা গিয়েছে, অগণতান্ত্রিক আচরণ করার জন্য সোমবার বোলসোনারোর এক সমর্থককে আটক করে পুলিশ। তার পরেই পুরোদমে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রসঙ্গত, নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মোট বৈধ ভোটের ৫০.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন লুলা। অন্য দিকে বোলসোনারো পেয়েছেন ৪৯.২ শতাংশ ভোট। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে প্রেসিডেন্ট পদে যোগ দেবেন লুলা।
কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, এই অস্থিরতার পিছনে হাত থাকতে পারে আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র। বরাবরই দক্ষিণ আমেরিকার বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক সরকারের গদি উল্টে দক্ষিণপন্থাকে প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে প্রচ্ছন্ন ও প্রকট ভাবে উঠে এসেছে আমেরিকার এই গুপ্তচর সংস্থার নাম। গুয়াতেমালার হাকোবো আরবেনজ়, নিকারাগুয়ার স্যান্দিনিস্তা সরকার থেকে শুরু করে চিলির আয়েন্দে সরকার— সব কিছুর পতনের পিছনে ছিল সিআইএর হাত। অভিযোগ এমনই। পাশাপাশি এ-ও অভিযোগ, বোলসোনারোর সঙ্গেও সিআইএর সম্পর্ক বেশ ভাল। এ বারে ব্রাজিলে নির্বাচনে বোলসোনারো অভিযোগ করেছিলেন ভোট কারচুপির। তখন শোনা গিয়েছিল যে এই বিষয়ে বেশি বিতর্কে না জড়াতে তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন সিআইএ-র ডিরেক্টর উইলিয়াম বার্নস। ফলে, লুলার জয়ে সিআইএ যে পাশা পাল্টানোর চেষ্টা করতেও পারে, এমন আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, এ-ও জানা গিয়েছে ১৯৪৬ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে আমেরিকা শুধু নির্বাচনেই হস্তক্ষেপ করেছে আশিটির বেশি দেশে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার প্রায় সারা দিনই দফায় দফায় ফেডেরাল পুলিশের সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে বোলসোনারোর সমর্থকেরা। কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেডের সাহায্যে তাদের আটকায় পুলিশ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাস ও গাড়িও জ্বালিয়ে দেয় হামলাকারীরা। ফেডেরাল পুলিশ সূ্ত্রে খবর, ক্যাপিটাল সিকিয়োরিটি ফোর্সের সাহায্যে বিক্ষোভকারীদের নিরস্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের এই ফলাফলের পরে বোলসোনারো প্রকাশ্যে হার স্বীকার করেননি, আবার ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আপত্তিও করেননি। তবে, থেমে নেই তাঁর সমর্থকেরা। হাইওয়ে থেকে শুরু করে সেনা ব্যারাকের সামনে দল বেঁধে প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। হোসে ত্রিনিদাদে নামের এক সমর্থক যেমন সংবাদমাধ্যমকে স্পষ্ট জানালেন, ‘বোলসোনারোরই জেতার কথা ছিল, কারচুপি করে লুলাকে জেতানোহয়েছে।’