COVID-19

WHO: যত বেশি গাফিলতি, তত লম্বা হবে অতিমারি, সতর্ক করে বলছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তা

বিশেষজ্ঞদের চিন্তা, যদি ফের কোনও নতুন ভেরিয়েন্ট তৈরি হয়! গত বছর শেষের দিকে সাইপ্রাসের বিজ্ঞানীরা ডেল্টাক্রনের ২৫টি নমুনা পাওয়ার দাবি করেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

বেশির ভাগ দেশ কোভিড নিয়ে কড়াকড়ি কমিয়ে দিয়েছে। ইউরোপের বহু দেশ সম্পূর্ণ ভাবেই করোনা-বিধি প্রত্যাহার করার পথে। বর্তমানে সক্রিয় থাকা করোনার ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট তেমন ক্ষতিকর নয় জানিয়ে ও অর্থনীতির চাকায় গতি আনতে দেশকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে চান রাষ্ট্রনেতারা। যদিও এতে খুশি নয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তাদের বক্তব্য, বেশি তাড়াহুড়ো করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। গাফিলতি করা হলে, অতিমারি আরও দীর্ঘদিন ধরে চলবে।

Advertisement

হু-র স্বাস্থ্যকর্তা মাইক রায়ান বলেন, ‘‘আমরা এটা বুঝতে পারছি, সবাই চাইছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে, সব কিছু খুলে দিতে। কিন্তু যদি এই স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ইচ্ছে অতিমারিকে আরও দীর্ঘায়িত করে। এই বিষয়টা কিন্তু আমাদের ভাবা উচিত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে আমার ধারণা, রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। আমি নিশ্চিত নই কী হবে। কিছু অনুমানও করছি না। বরং এ ভাবে সব বিধিনিষেধ লঘু করে দেওয়া নিয়ে কিছুটা উদ্বেগে রয়েছি।’’

বিশেষজ্ঞদের সকলেরই চিন্তা, যদি ফের কোনও নতুন ভেরিয়েন্ট তৈরি হয়। গত বছর শেষের দিকে সাইপ্রাসের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন, সেখানে ডেল্টাক্রনের ২৫টি নমুনা পাওয়া গিয়েছে। গত কাল ব্রিটেন জানিয়েছে, সে দেশে ডেল্টাক্রন মিলেছে। এটি ডেল্টা ও ওমিক্রনের মিশ্রণে হাইব্রিড ভেরিয়েন্ট। এর ক্ষতি করার ক্ষমতা কতটা, তা অবশ্য জানানো হয়নি এখনও। ওমিক্রনের একটি সাব-ভেরিয়েন্ট বিএ.২ নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। ওমিক্রন সংক্রমণ এখন কমতে শুরু করলেও, বিএ.২-র চরিত্র নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা। তবে সবচেয়ে বেশি চিন্তা, যদি ফের কোনও ‘ভেরিয়েন্ট অব কনসার্ন’-এর আবির্ভাব ঘটে! যে হেতু সমস্ত বিধি তুলে দেওয়া হচ্ছে, বিপদ বুঝে ওঠার আগেই বড় ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

হু-র বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভন কেরকোভ সাংবাদিক বৈঠকে আজ এ প্রসঙ্গে বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বহু দেশকেই কিন্তু আগে আমরা দেখেছি, নিয়ম লঘু করার পরে ফের পুরনো নিয়মে ফিরতে হয়েছে। আবার কিছু দেশ ধাপে ধাপে কড়াকড়ি কমিয়েছে। এখন শুনছি, কিছু কিছু দেশ সব নিয়ম তুলে দিতে চাইছে। এর মধ্যে কিছু দেশ তুলনায় ভাল পরিস্থিতিতে। তাদের হাতে প্রচুর পরিমাণ ভ্যাকসিন রয়েছে, জনসংখ্যার বড় অংশের ইমিউনিটি রয়েছে এবং পরিস্থিতি বিপজ্জনক হলে সামলানোর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তাদের দেখাদেখি অন্যরাও এ কাজ করলে বিপদ।’’ মারিয়ার বক্তব্য, ‘‘কিছু দেশকে ভুল পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ সব করবেন না। কাউকে ধন্দে ফেলে দেবেন না। রাষ্ট্রনেতারা একটা বিষয় জেনে রাখুন, কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত এখনও।’’

ব্রিটেন ঘোষণা করেছে, শীঘ্রই (এ মাসেই) সমস্ত করোনা-বিধি তুলে নেওয়া হবে। এমনকি মাস্কও পরতে হবে না কাউকে। ইউরোপের একাধিক দেশ সেই পথে হাঁটার কথা ভাবছে। আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশও করোনা-বিধি তুলে দিতে চায়। সামনেই মিডটার্ম নির্বাচন এ দেশে। করোনা-বিধি নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। রিপাবলিকানরা চিরকালই এ সবের বিরুদ্ধে। শোনা যাচ্ছে, এই কারণেই শাসক দল ডেমোক্র্যাটও এ বার ‘জনদরদী’ হতে চায়।

পর্তুগাল, জাপান, ইজ়রায়েল বিধি প্রত্যাহার করছে। সুইৎজারল্যান্ডও প্রায় সমস্ত কড়াকড়ি তুলে দিয়েছে। কানাডা ও সিঙ্গাপুর জানিয়েছে, শীঘ্রই তারা এ পথে হাঁটবে। হু-প্রধান টেড্রোস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস আজ জানিয়েছেন, নতুন ভেরিয়েন্ট তৈরির জন্য আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে। দেশগুলো বিধি হাল্কা করে দিচ্ছে। মানুষজন সাবধানতা কমাচ্ছেন। আর এ দিকে কিছু দেশে ভ্যাকসিন নেই। যথেষ্ট করোনা-পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘যত গাফিলতি থাকবে, বৈষম্য চলবে, অতিমারি তত দীর্ঘায়িত হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement