কখনও গাঢ় সবুজের সামরিক পোশাক, কখনও বা একেবারে চিরাচরিত পোশাকে। আবার স্বল্পবাসেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাইল্যান্ড রাজার সঙ্গী সিনেনার্ট ওঙ্গভাজিরাপাকদির এমন নানা রূপ দেখতে রাজবাড়ির ওয়েবসাইটে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন তাই জনতা। সে ওয়েবসাইটে এতটাই ভিড় হয়েছে যে, তা ক্র্যাশ করে গিয়েছে। কিন্তু কে এই সিনেনার্ট ওঙ্গভাজিরাপাকদি?
সম্প্রতি সিনেনার্টকে একটি তকমা দিয়েছেন তাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালঙ্গকর্ণ। যে সে তকমা নয়, তার একটা গালভরা নামও রয়েছে, ‘চাও খুন ফ্রা’। অর্থাৎ তাই রাজার রাজকীয় সঙ্গী। নিজের ৬৭তম জন্মদিনেই সিনেনার্টকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই তকমা দিয়েছেন তাই রাজা।
গত জুলাইতে রাজকীয় সঙ্গী নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি নজিরও গড়েছেন সিনেনার্ট। গত এক শতকে তিনিই হলেন তাইল্যান্ডের প্রথম মহিলা, যিনি এই তকমা পেলেন।
সিনেনার্ট আসলে তাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর এক জন মেজর জেনারেল। নার্স হিসাবেও এক সময় সে দেশের সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। তবে এখন তাইল্যান্ডের রাজকীয় দেহরক্ষী হিসাবে সে দেশের রাজাকে রক্ষা করাই তাঁর প্রধান কাজ। ২০১৭ থেকেই এ কাজ করছেন সিনেনার্ট।
এ বার ফিরে যাওয়া যাক সিনেনার্টের ছোটবেলায়। তাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় নান প্রদেশে ১৯৮৫ সালের ২৬ জানুয়ারিতে জন্ম সিনেনার্টের। পড়াশোনাও সেরেছেন সেখানেই। এর পর ২০০৮-এ রয়্যাল তাই আর্মি নার্সিং কলেজে ভর্তি হন। সেই কলেজ থেকেই স্নাতক হন।
কলেজের পর বেশ কয়েকটি মিলিটারি স্কুলে সামরিক ট্রেনিং নেন সিনেনার্ট। ২০১৫-তে জাঙ্গল ওয়ারফেয়ারে ফের স্নাতক। সে বছর আকাশপথে যুদ্ধের একটি বিশেষ ট্রেনিংও নেন। দু’বছর পর সেনা কলেজ ও নৌসেনা স্কুল থেকে দু’টি আলাদা কোর্স শেখেন। বায়ুসেনার অ্যাকাডেমি থেকে ফের স্নাতক হওয়ার পর বিমানচালনায় আরও দক্ষ হতে পাড়ি দেন জার্মানি।
যে ছবিগুলি দেখতে রাজকীয় ওয়েবসাইটে ভিড় করেছেন জনতা, তা গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়। তাইল্যান্ডের রাজার ৪৬ পাতার জীবনীতে ঠাঁই পেয়েছে ৩৪ বছরের সিনেনার্টের নানা রূপের মোট ৬০টি ছবি। তবে সে ছবি অনলাইনে ছাড়া হয়েছে সোমবার। সে ওয়েবসাইট ক্র্যাশ করার পরের দিন তা কোনওক্রমে ঠিকঠাক করা হয়েছে।
ছবিগুলিতে রাজ পরিবারের একেবারে অন্দরের চেহারা প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। কখনও দেখা গিয়েছে, রাজা মহা ভাজিরালঙ্গকর্ণের সঙ্গে জংলা সামরিক পোশাকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সিনেনার্ট। তবে তাঁরা দু’জনেই পরম মমতায় তাকিয়ে রয়েছেন রাজার হাতে ধরা একটি ধবধবে সাদা পুড্লের দিকে।
কখনও বা সিনেনার্টকে দেখা গিয়েছে একেবারে অন্য ভূমিকায়। স্পোর্টস ব্রা, সঙ্গে গাঢ় শেডের চশমায় চোখ ঢেকে বিমানের ককপিটে, চালকের আসনে। কখনও বা চড়া মেকআপে একেবারে সামরিক পোশাকে যুদ্ধবিমান চালাচ্ছেন তিনি।
আরও একটি ছবিতে সিনেনার্টের অন্য চেহারা দেখা গিয়েছে। সেনাকর্মীদের সঙ্গে বিমানের মধ্যে দাঁড়িয়ে সেনানার্ট। ছোট করে ছাঁটা চুল। সঙ্গে গোলাবারুদ-অস্ত্রশস্ত্র। অন্য একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, যুদ্ধবিমানের দরজার কাছে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তিনি। প্যারাশুট পরে নীচে ঝাঁপ অপেক্ষায়।
ছোটখাটো চেহারার সিনেনার্ট কখনও আবার একেবারে যুদ্ধং দেহি রূপে অবতীর্ণ। ফায়ারিং রেঞ্জে লক্ষ্যভেদ করতে প্রস্তুত। তবে শুধু যুদ্ধং দেহী রূপেই নয়, চিরাচরিত পোশাকে হাসিমুখে তাই রাজার পাশে বসেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
এ সব ছবি দেখতে রাজকীয় ওয়েবসাইটে উৎসাহীদের ভিড় হলেও তা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও কানাকানি করতে পারবেন না তাইল্যান্ডের আমজনতা।
রাজবাড়ি বা তাঁর সদস্যদের নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলায় কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাইল্যান্ডে। এমনকি, তাতে রাজার সম্মানহানি হলে অপরাধীর ১৫ বছরের কারাবাসও হতে পারে।