ভয়ার্ত: বাঁচাতে মরিয়া মা। লন্ডন ব্রিজে হামলার পর। ছবি: রয়টার্স।
তিন মাসে তিন বার। সন্ত্রাস যেন পিছু ছাড়ছে না ব্রিটেনের। শিয়রে ভোট। তার পাঁচ দিন আগে সন্ত্রাসের শিকার লন্ডন ব্রিজ এবং বরো মার্কেট এলাকা।
মার্চ মাসে ওয়েস্টমিনস্টার হামলার স্মৃতিই যেন শনিবার রাতে ফিরে এল লন্ডন ব্রিজে। উন্মত্ত গতির ভ্যান এবং ছুরি হামলার বলি হলেন সাত জন। জখম ৪৮। ঘটনার মাত্র আট মিনিটের মধ্যে ৫০টা গুলি খরচ করে ৩ আততায়ীকে মারে পুলিশ। কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী এখনও ঘটনার দায় স্বীকার করেনি।
শনিবার রাত দশটা নাগাদ জমজমাট ছিল লন্ডনের রাস্তাঘাট, পাব, রেস্তোরাঁ। ভিড় নাইটক্লাবে। লন্ডন ব্রিজের দক্ষিণ দিক থেকে তীব্র গতিতে এগিয়ে আসছিল একটি সাদা ভ্যান। আচমকাই সেটি ফুটপাথে উঠে পর পর ধাক্কা মারতে থাকে পথচারীদের। বরো মার্কেটের দিকে খানিক এগিয়ে দুম করে একটি রেলিং ভেঙে দাঁড়িয়ে যায় সেটি। ভ্যান ছেড়ে লাফিয়ে নেমে তিন আততায়ী সেঁধিয়ে যায় ভিড়ের মধ্যে। প্রত্যেকের হাতে ছুরি। কাছাকাছি পাব এবং বার-এ ঢুকে এলোপাথাড়ি ছুরি চালাতে শুরু করে তারা।
‘‘এ ভাবে আর চলবে না!’’ রবিবার ১০, ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে।
পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হুইট্সহিফ পাবে ঢুকে তিন আততায়ীকে মেরে ফেলে পুলিশ। এ বাদে গাড়ির ধাক্কা আর ছুরির ঘায়ে নিহত এখনও পর্যন্ত ৭। ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সন্ত্রাস যে ফিরে আসতে পারে, সে আশঙ্কা ম্যানচেস্টারের ঘটনার পরই প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। শনিবারের ঘটনার পরে কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টি শেষ বেলার প্রচার বন্ধ রেখেছে। কোবরা জরুরি কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন টেরেসা। তার পরে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে এসে বলেছেন, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে। ভাবার কোনও কারণ নেই যে এ ভাবেই সব চলতে থাকবে।’’ টেরেসা মনে করছেন, ব্রিটেনে কট্টরপন্থার প্রতি অতিরিক্ত সহিষ্ণুতা রয়েছে। তাঁর মতে, এ বার প্রয়োজন ‘কড়া’ দাওয়াই।
১) লন্ডন ব্রিজ- পথচারীদের ধাক্কা মারতে মারতে এ পথেই ধেয়ে আসে ভ্যান
২) ব্যারোবয় অ্যান্ড ব্যাঙ্কার পাবের কাছে হঠাৎ থামে। আততায়ীরা ভ্যান থেকে লাফিয়ে নেমে ছুটে যায় বরো মার্কেটের দিকে
৩) বেশ কিছু জায়গায় ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। পরে পুলিশ তিন জনকেই গুলি করে মারে হুইট্সহিফ পাব-এ
টেরেসার এই প্রতিক্রিয়ায় অবাক হচ্ছেন না কেউই। ২০০৫ সালে ১৫ দিনের মাথায় দু’বার বিস্ফোরণের ঘটনার পর আর এ ভাবে সন্ত্রাসদীর্ণ হয়নি ব্রিটেন। মার্চে ওয়েস্টমিনস্টারের পরে মে-তে ম্যাঞ্চেস্টারে পপ তারকা আরিয়ানা গ্রান্ডের শোয়ে হামলা। দু’সপ্তাহের মধ্যে আবার লন্ডন ব্রিজ। ঘটনাচক্রে রবিবারই আরিয়ানা ম্যাঞ্চেস্টারে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধায় ফের অনুষ্ঠান করছেন। পপ কনসার্ট থেকে ক্রিকেট ম্যাচ থেকে ভোট প্রচার— ব্রিটেন এখন সন্ত্রাসের ছায়াতেই বাঁচছে।