আফগানিস্তানে মহিলাদের উচ্চশিক্ষায় নয়া ফরমান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকা যাবে না। ছবি: রয়টার্স।
স্কুলের পর এ বার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও মেয়েদের ঢোকা নিষিদ্ধ হয়ে গেল আফগানিস্তানে। এ বিষয়ে নয়া ফরমান জারি করেছে তালিবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রক। তালিবান সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছে আন্তর্জাতিক মহল। তালিবানের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আফগানিস্তানে আমেরিকার দূত জালমে খলিলজাদ বলেন, “মহিলাদের উচ্চশিক্ষায় যে ভাবে নিষেধাজ্ঞা চাপাল তালিবান, তা বরদাস্ত করা যায় না।”
২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মহিলাদের বিষয়ে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালিবান। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, নিষেধাজ্ঞার বহর ততই বেড়েছে। মহিলাদের অধিকার নিয়েও অনেক রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি সব মিথ্যা। প্রথমে মধ্যশিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে তারা। মেয়েদের স্কুল যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তার পর ধীরে ধীরে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
শুধু তা-ই নয়, মহিলাদের পার্ক, জিমে যাওয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। এমনকি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোথাও ঘুরতে গেলে বাড়ির পুরুষদের সঙ্গেই যেতে হবে। অন্যথায় নেমে আসতে পারে শাস্তির খাঁড়া। এ বার সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নতুন সংযোজন বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেও মহিলাদের ঢোকা নিষিদ্ধ করল তালিবান।
তালিবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ বার থেকে আফগানিস্তানে সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রীরা ঢুকতে পারবেন না। মন্ত্রিসভার সম্মতিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সপ্তাহখানেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রবেশিকা পরীক্ষা হয়েছিল। তার পরেই সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সে দেশের ছাত্রীদের মধ্যে একটা চরম হতাশা তৈরি হয়েছে। এত দিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছেলেমেয়েদের আলাদা আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ বার সেই পথও বন্ধ হয়ে গেল ছাত্রীদের।
নানগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজ়ম এবং কমিউনিকেশনের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, “আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল তালিবানের এই সিদ্ধান্তের ফলে। চোখের সামনে সব কিছু যেন অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখছি। এত দিন ধরে যা অর্জন করেছিলাম, সব শেষ হয়ে যাবে।” তাঁর কথায়, “মেয়ে হয়ে জন্মানো কি অপরাধ? যদি তা-ই হয়, তা হলে কেন আমি ছেলে হয়ে জন্মালাম না। আমার বাবার বড় স্বপ্ন ছিল, আগামী দিনে আমি বড় সাংবাদিক হব। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।”