(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা। সজীব ওয়াজেদ জয় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা আবার তাঁর দেশে ফিরবেন! এমনই দাবি করলেন হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাজিদ বলেছেন, ‘‘মানছি আমি বলেছিলাম, মা আর দেশে ফিরবেন না। কিন্তু তার পর থেকে গত দু’দিনে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। আমাদের পার্টির নেতাদের উপর ক্রমাগত আক্রমণ শুরু হয়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের বাঁচাতে যা যা করা প্রয়োজন, আমরা তা-ই করব।’’
সোমবার দুপুরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে সেনাবাহিনীর বিমানে ভারতে চলে আসেন হাসিনা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন শেখ রেহানা। তবে হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি তাঁর দল আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা। হাসিনা চলে যাওয়ার পরে আন্দোলনকারীদের হামলার মুখে পড়েন তাঁদের অনেকেই। অনেকের মৃত্যু হয়। অনেকে ঘরছাড়া হন। আত্মগোপনও করতে হয় বহু নেতাকে। শেষে এই সমস্ত নেতাদের অনেকেই ক্ষোভ উগরে দেন হাসিনার বিরুদ্ধে। কারও কণ্ঠে ঝরে পড়ে হতাশা। হাসিনার মন্ত্রিসভার এক প্রাক্তন সদস্য বলেই ফেলেন, ‘‘আমাদের এ ভাবে বিপদে ফেলে রেখে কী ভাবে চলে গেলেন উনি!’’ বৃহস্পতিবার সম্ভবত সেই সব বলা, না-বলা প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন হাসিনা পুত্র জয়। পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ হল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার। আমরা এ ভাবে অবলীলায় আমাদের দেশের মানুষ এবং আমাদের দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে পারি না। উনি (শেখ হাসিনা) দেশে ফিরবেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলেই ফিরবেন।’’ তবে ৭৬ বছরের মুজিব-কন্যা দেশে এক জন ‘সক্রিয় রাজনীতিবিদ’ হিসাবে ফিরবেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি জয়। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের একাংশে দাবি উঠেছে, হাসিনাকে দেশে ফেরানো হোক। আবার আওয়ামী লীগের নেতাদের একাংশও বলতে শুরু করেন, হাসিনা দেশে ফিরে তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন। তবে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে পরিমাণ গণরোষ তৈরি হয়েছে এবং তার যা বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছে, তাতে তিনি দেশে ফিরলে তাঁর নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তার কারণ রয়েছে।
বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ নিচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। হাসিনার পুত্র জয় বাংলাদেশের নতুন সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, ‘‘দয়া করে দেশে আইন ও শৃঙ্খলার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন। কারণ, দেশে চূড়ান্ত অরাজকতা চলছে। দেশটা ক্রমেই দ্বিতীয় আফগানিস্তান হয়ে উঠছে।’’ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জয় সাহায্য চেয়েছেন ভারত সরকারেরও। হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে জয় বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ ভারতের সব সময়ের সহযোগী। তাই আমরা চাই, ভারত আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক। ’’
জয়ের মতে, বাংলাদেশে চিরকাল অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথগ্রহণ করার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরেই প্যারিস থেকে ঢাকায় ফিরেছেন ইউনূস। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ‘সুশাসন’ ফেরানোর বার্তাও দিয়েছেন তিনি। সে প্রসঙ্গ টেনে জয় বলেছেন, ‘‘আপনারা এ ভাবে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে ছেঁটে ফেলতে পারেন না। ওঁর (ইউনূস) ব্যক্তিগত মতামত যা-ই হোক না কেন, উনি ঐক্যের সরকার গঠনের বিষয়ে যা বলেছেন। আশা করব, সেই প্রতিশ্রুতি তিনি পালন করবেন। অতীতের ভুল থেকে ভবিষ্যৎকে নষ্ট হতে দেবেন না।’’
বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘স্টে উইথ শেখ হাসিনা’ বলে একটি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে জয়ের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘যখন আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ, আওয়ামী লীগের তৃণমূল স্তরের নেতা-কর্মী এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হচ্ছে, সেই পরিস্থিতিতে আমরা বসে থাকতে পারি না। বঙ্গবন্ধুর পরিবার সব সময়েই বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবে।’’ জয় আরও বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ কিন্তু মরে যায়নি। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব নয়।’’