শেখ হাসিনা। —নিজস্ব চিত্র।
গত বারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ২০২১-এর মধ্যে ডিজ়িটাল বাংলাদেশ গঠন। বুধবার দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪-এর নির্বাচনের যে ইস্তাহার প্রকাশ করলেন, তার লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠন। স্লোগান— ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান/বাড়বে এ বার কর্মসংস্থান’। ঢাকার পাঁচতারা হোটেলে এই ইস্তাহার প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৫ বছরের সরকার পরিচালনার পথপরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি, তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করব।”
জানুয়ারির ৭ তারিখে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে সবচেয়ে বেশি যে দু’টি বিষয়ে ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে— তার একটি আকাশ ছোঁয়া দ্রব্যমূল্য, অন্যটি গ্রাম ও শহর জুড়ে বেকারত্ব। ‘আমাদের বিশেষ অগ্রাধিকার’ শিরোনামে ১১টি বিষয়কে ইস্তাহারের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে, যার প্রথমটি ‘দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা’র প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়টি ‘কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।’ ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিষয়টি বারে বারে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। টানা তিন বার ক্ষমতায় থাকাকালীন পদ্মা সেতু, ঢাকার মেট্রো রেল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গপথের মতো মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলির কথা তুলে ধরা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের শাসনামলে ‘উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ’।
বক্তৃতায় হাসিনা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে স্তব্ধ করতেই যুগপৎ ভাবে নির্বাচন বানচাল করার ডাক দিয়েছে বিএনপি এবং জামাতে ইসলামি। তাঁর কথায়, ‘নির্বাচন এলেই অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, সন্ত্রাস, যানবাহন পোড়ানো ও বোমাবাজির মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তারা মানুষকে ঘরবন্দি করতে চায়। এ বার বিদেশ থেকে সেই কাজের কলকাঠি নাড়া হচ্ছে।’ শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য অধীর হয়ে উঠেছেন। সেই জন্যই নির্বাচন বানচালের ডাক দেওয়া বিএনপি-জামাতের হরতাল-অবরোধের ডাকে কোনও সাড়া মিলছে না।
এ দিনই ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি পর্যবেক্ষক দল নির্বাচন বয়কট করা বিএনপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বিএনপি নেতৃত্ব তাঁদের বোঝান, নির্বাচনের নামে আসলে একটি নাটক মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা হয়েছে। মানুষ যাঁকেই ভোট দিন, তিনি হয় শাসক দলের প্রতীক নেওয়া প্রার্থী, অথবা অন্য প্রতীকে দাঁড়ানো শাসক দলের বিদ্রোহী প্রার্থী, অথবা শাসক দলেরই কোনও ডামি প্রার্থী। আর বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে বিদেশিদের ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সংসদীয় কেন্দ্রের প্রার্থীদের পরিচয়ও নথি হিসাবে ইউরোপীয় পর্যবেক্ষকদের হাতে তুলে দেন বিএনপি নেতারা।