Causes of Winter Allergy

কেন শীতের দোসর অ্যালার্জি? এই মরসুমে তা কত ধরনের হতে পারে, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা

প্রায় প্রতি দিনই ফোনে ‘রেড অ্যালার্ট’ আসছে। ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক’ জানান দিচ্ছে, বাতাসের মান ভাল নয়। এ শহরের বিষাক্ত বায়ুই কি অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্টের কারণ? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:২৩
Share:

শীত এলেই অ্যালার্জি-জনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায় কেন? ছবি: সংগৃহীত।

শীতকালীন সর্দিকাশি নতুন নয়। তবে সকালে ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই একনাগাড়ে হাঁচি হওয়া কিংবা চোখ থেকে জল পড়ার সমস্যা কিন্তু সাধারণ না-ও হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, শীতে অ্যালার্জি- জনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তাই নাক থেকে অনবরত জল পড়া, খুসখুসে কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

Advertisement

শীতের বাতাস এমনিতেই ভারী হয়। বাতাসে ধূলিকণা বেশি থাকে। তার উপর বাতাসে আর্দ্রতাও কম থাকে। তাই বাতাসে ভাসমান ভাইরাসগুলি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সহজে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বছরের অন্যান্য সময়ে যে পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে, তা কিন্তু নয়। তা হলে শীতকালই কেন অ্যালার্জির মরসুম হয়ে উঠছে? এর থেকে মুক্তির উপায়ই বা কী? চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “শীতকালে সাধারণত দু’ধরনের অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়ে। প্রথমটি হল ‘কোল্ড অ্যালার্জি’ এবং দ্বিতীয়টি হল ‘স্মগ অ্যালার্জি’। ধরা যাক, ঘুম থেকে ওঠার পরই অগুনতি হাঁচি হচ্ছে, নাক থেকে জল পড়ার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। আবার, কলের জলে হাত দিলে অনেকেরই হাতের পাতা লাল হয়ে যাচ্ছে, চুলকাচ্ছে। এগুলি কিন্তু কোল্ড অ্যালার্জির লক্ষণ। আবার, এই সময়ে কুয়াশা (ফগ) এবং ধোঁয়া (স্মোক) দুইয়েরই বাড়বাড়ন্ত হয়। এই দুইয়ে মিলে যে ‘স্মগ’ বা ‘ধোঁয়াশা’ তৈরি হয়, তা বাতাসের মান (এয়ার কোয়ালিটি) আরও খারাপ করে দেয়। সেখান থেকে খুসখুসে কাশি, চোখ থেকে জল পড়া, অ্যালার্জি-জনিত শ্বাসকষ্ট হতে পারে।”

খাবার থেকেও তো অ্যালার্জি হয়, তার সঙ্গে শীতের যোগ রয়েছে? অ্যালার্জি হয় বলে অনেকেই হয়তো ডিম, বেগুন, কাঁকড়া, চিংড়ি খান না। তবে সুবর্ণ বলেন, “এই ধরনের খাবার ছাড়াও শীতকালীন নানা ধরনের সব্জি বা ফল থেকেও কিন্তু অ্যালার্জি হতে পারে। ফল বা সব্জির মধ্যে যে বিশেষ ধরনের প্রোটিন থাকে, তা অনেকের শরীরেই অ্যালার্জেন হিসাবে কাজ করে। অনেকের তো গুড় খেলেও অ্যালার্জি হয়।”

Advertisement

বাতাসে বাড়তে থাকা ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক’ অ্যালার্জির জন্য কতটা দায়ী? চিকিৎসক অদ্রিজা রহমান মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাংঘাতিক রকমের দায়ী। কিন্তু এখানে একটু বোঝার বিষয় রয়েছে। দূষণের কারণে যে সকলে একই রকম ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তা নয়। কিন্তু এক এক জনের অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা বেশি। যেমন কারও রক্তে ‘ইয়োসিনেফিল’-এর পরিমাণ বেশি থাকে, কিংবা কারও হয়তো হিস্টামিন কোষ ভেঙে রক্তে মিশল না। সে ক্ষেত্রে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া আলাদা হবে। তবে শীতকালে বাতাসে দূষণের মাত্রা সব সময় বেশি থাকে। দীপাবলি পরবর্তী সময় থেকে এই দূষণ বাড়তে থাকে। শীতকালে শুকনো ধুলোও খুব বেশি ওড়ে। বছরের অন্যান্য সময়ে এই ধুলো এতটা থাকে না। কিন্তু শীতকালে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বাইরের দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন, যত দূর চোখ যায় শুধুই ‘ধোঁয়াশা’। এই ধোঁয়া এবং কুয়াশা মিশ্রিত বাতাস কিন্তু শ্বাস নেওয়ার উপযুক্ত নয়।”

শীত আসার আগে থেকেই বাড়ির ছাদে, বারান্দায় ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, পিটুনিয়া, গাঁদা কিংবা জ়ারবেরার মতো নানা ধরনের ফুলগাছের চারা বসান অনেকে। কিন্তু ফুল ধরতে না ধরতেই সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। ফুল থেকেও কি অ্যালার্জি হতে পারে? সুবর্ণ বলেন, “ফুলের মধ্যে পরাগ রয়েছে। পরাগ অর্থাৎ পোলেন। যাঁরা গাছের পরিচর্যা করেন, তাঁদের যদি এই নির্দিষ্ট পোলেনে সমস্যা থাকে তা হলেও অ্যালার্জি হতে পারে। এ ছাড়া বাড়িতে পোষ্য থাকলে, তার লোম থেকে অ্যালার্জি হয়। অনেকেই হয়তো জানেন না, শীতে উলের পোশাক থেকেও অনেকের কিন্তু অ্যালার্জি হতে পারে।”

এ ছাড়া অনেক বাড়িতে শিশু, বয়স্ক কিংবা শীতকাতুরে মানুষ থাকেন। তাঁরা ঠান্ডা থেকে বাঁচতে সারা দিন ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখেন। ঘরে রোদ, হাওয়া কিছুই প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ডাস্ট, মাইট্‌স জমে। সেখান থেকেও কিন্তু নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। ঘরের মধ্যে রুম হিটার জ্বালালেও চোখে অ্যালার্জি- জনিত সমস্যা হতে পারে।

এর থেকে মুক্তির উপায় কী?

চিকিৎসকেরা বলছেন, কী কী থেকে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হতে পারে, তা যদি আগে থেকে জানা থাকে, তা হলে এতটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বাইরে বেরোনোর আগে অবশ্যই মাস্ক পরা উচিত। এ ছাড়া ঘরে ধুলো না জমতে দেওয়া দরকার। শুধু জামাকাপড় নয়, শীতে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থেকে বাঁচতে বিছানার চাদর, বালিশের খোলও নিয়মিত কাচতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement