পিভি আনওয়ার। —ফাইল ছবি।
মুকুল রায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় দলের কাঠামো তৈরির চেষ্টা করেছিলেন সুদূর কেরলে। কিন্তু তা চেষ্টার পর্যায়েই থেকে গিয়েছিল। ২০২৫ সালের শুরুতে সেই বামশাসিত কেরলের এক বিধায়ক যোগ দিলেন বাংলার শাসকদল তৃণমূলে। পিভি আনওয়ার বামেদের সমর্থনে নির্দল হিসেবে নিলাম্বুর কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। আনওয়ার শুক্রবার তৃণমূলের মুকুলের পদের উত্তরসূরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে জোড়াফুলের উত্তরীয় গলায় পরেছেন। তবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগে বহু দিন ধরে, বহু পথ ঘুরেছেনও তিনি।
আনওয়ারের ভোটে লড়া শুরু ২০১১ সালে। নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে পরাজিত হন। একই ভাবে হারেন ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেও। কিন্তু কপাল খোলে ২০১৬ সালে। বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে জিতে প্রথম বিধায়ক হন। ফের একই সমীকরণে জেতেন ২০২১ সালে। কিন্তু বেশ কিছু দিন হল নানা কারণে আনওয়ার সরব হয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে। প্রবীণ সিপিএম নেতা বিজয়নের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন। শেষমেশ কেরল সিপিএম আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেয়, পার্টির কেউ যেন আনওয়ারের সঙ্গে কোনও সংশ্রব না রাখেন। সেই সময়েই নির্দল বিধায়ক রাজনৈতিক ভাবে ‘অনাথ’ হয়ে পড়েন।
এর মধ্যেই একটি ঘটনার পর কেরল সরকারের বনবিভাগের সরকারি দফতরে ভাঙচুরের ঘটনায় নাম জড়ায় এই বিধায়কের। তাঁকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। তবে ১৫ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেয়ে যান আনওয়ার। এর পর থেকেই ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ খোঁজার চেষ্টা শুরু করেন তিনি। গত কয়েক মাস ধরে মরিয়া হয়ে সেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। প্রথমে চেষ্টা করেছিলেন তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকে-তে যোগ দেওয়ার। কিন্তু হয়নি। বৈঠক করেছিলেন কেরলের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ সারির নেতৃত্বের সঙ্গে। তা-ও পরিণতি পায়নি। দিন কয়েক আগে বৈঠক করেছেন কেরলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোটের শরিক মুসলিম লিগ নেতৃত্বের সঙ্গেও। তার পর তাঁর তৃণমূলে যোগদান। সূত্রের খবর, কেরলের এক প্রথম সারির পুলিশকর্তার সঙ্গে আনওয়ারের সংঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তাঁকে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ খুঁজতেই হত। তিনি এমন দলের খোঁজ করছিলেন, যাঁদের সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে। তাই প্রথম চেষ্টা ছিল ডিএমকে।
কিন্তু তৃণমূল কেন দলে নিল আনওয়ারকে? এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনও ব্যাখ্যা তৃণমূল দেয়নি। তবে একান্ত আলোচনায় দলের নেতাদের একাংশ সেই ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। ঘটনাচক্রে, বাংলায় সিপিএম বিরোধিতাকে পুঁজি করেই তৃণমূলের উত্থান। সেই সিপিএম এখন এ রাজ্যে শূন্য। আবার একমাত্র যে কেরলে সিপিএম সরকার চালাচ্ছে, সেখানে তাদের সমর্থনে জেতা বিধায়ক ছিলেন আনওয়ার। তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এই বার্তা মোক্ষম ভাবে দেওয়া গেল যে, যেখানে শাসক সিপিএম, সেখানেই তাদের আঘাত করা গিয়েছে। যদিও এর ফলে কেরলের মাটিতে তৃণমূল কতটা শক্তিশালী হবে, তা নিয়ে সংশয়ী অনেকে। উল্লেখ্য, আগামী বছর বাংলার সঙ্গেই কেরলে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা।