রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ফাইল ছবি।
কামানের মুখটা নিজের দিক থেকে আমেরিকা তথা পশ্চিমি দুনিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দিলেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে জি২০-র বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে ঝড় উঠেছিল ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে। মূলত রাশিয়া এবং আমেরিকার সংঘাতের কারণেই কোনও যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। আজ রাইসিনা সংলাপে বলতে উঠেলাভরভ আসর গরম করেছেন। একের পর এক ঝাঁঝালো আক্রমণ করে দুষেছেন আমেরিকা, পশ্চিম বিশ্ব এবং অবশ্যই ইউক্রেনকে। তাঁর কথায়, ইরাক, ইরান বা আফগানিস্তানে কী ঘটেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না কেন? তাঁর মতে জি২০ যে ভাবে ইউক্রেনকে কেন্দ্রস্থলে রাখার চেষ্টা করল তা ‘লজ্জাজনক’। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীর ঘোষণা— রাশিয়া যুদ্ধ করছে না, যুদ্ধ থেকে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টাকরছে মাত্র।
লাভরভের কথায়, “গোটা জি২০ দেখলাম ইউক্রেন নিয়ে পড়ে রইল। কি আর করব, আমার ভারতীয় বন্ধুদের কাছে জানতে চাইলাম, জি২০ কি কখনও তার নথিতে ইরাকের ঘটনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে? জি২০ তৈরিই হয়েছিল অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। যখন বহু বছর পরে রাশিয়া নিজেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা শুরু করেছে, তখন দেখা যাচ্ছে একমাত্র সেটা নিয়েই কথা হচ্ছে। এটা খুবই লজ্জাজনক।”
গত কাল রাতে সাংবাদিক বৈঠক করেও পশ্চিমকে দুষেছিলেন রাশিয়ার মন্ত্রী। অন্য দিকে, জি২০ বৈঠকের ভিতরে ও বাইরে আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সরব হয়েছিলেন রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে। তিনি লাভরভের সঙ্গে মুখোমুখি বসেও অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলেন। শুধু আমেরিকাই নয়, ভারত সফরে আসা ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিও এই রাইসিনা সংলাপের সূচনা বক্তৃতায় বলেছেন, “রাশিয়া শুধু ইউক্রেনের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছে না, একতরফা ভাবে বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধেও হানাদারি করছে।”
লাভরভ বলেন, “পশ্চিম বিশ্ব গা-জোয়ারি এবং ব্ল্যাকমেলের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন বিস্তারিত ভাবে বলেছেন আমরা ঠিক কী করছি এবং কেন করছি।” রাশিয়ার মন্ত্রীর প্রশ্ন, “আপনারা কি কখনও আমেরিকা বা নেটোর কাছে জানতে চেয়েছেন তারা আফগানিস্তান, ইরাক, ইরানে কী করেছে? ১৯৯৯ সালে সার্বিয়ায় কখন বোমা ফেলা হয় তা তাদের মনে নেই। আমরা আসলে একটা যুদ্ধ থেকে বাঁচার জন্য লড়াই করছি। ইউক্রেনে যখন রাশিয়ার ভাষা বাতিল হল, কেউ তো আঙুল তোলেননি। আপনারা কি ভাবতে পারেন আয়ারল্যান্ড থেকে ইংরেজি উঠে যাচ্ছে?
শুধু পশ্চিমকে দোষারোপই নয়, ভারত এবং চিনকে একই বন্ধনীর মধ্যে রেখে এই দুই রাষ্ট্রকে বন্ধু হিসাবে সম্বোধন করেছে মস্কো। লাভরভের কথায়, “আমরা কখনও কারও বিরুদ্ধে কোনও বন্ধুকে ব্যবহার করি না। ভারত এবং চিন— উভয়ের সঙ্গে আমাদের দুর্দান্ত সম্পর্ক রয়েছে। একে অন্যের সঙ্গে লড়িয়ে দেওয়া আমাদের কাজ নয়। ভারত ও প্রশান্ত মহাসগরীয় নীতির নামে অন্য কিছু গোষ্ঠী সেটা করে থাকে।”