ফাইল চিত্র।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষের কোনও ইঙ্গিত হয়তো এখনই নেই। কিন্তু রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের তেজ কিছুটা কমেছে। ঘনঘন পরমাণু হামলার হুমকি নেই। রুশ যুদ্ধবিমানের অতর্কিতে হানা ও গোলাবর্ষণের খবরও মিলছে কম। তারা এখন ইউক্রেনের ডনবাস এলাকায় সীমাবদ্ধ। বাকি সব জায়গা থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে ইউক্রেনের বাহিনী। যুদ্ধের গতিপথ যে বদলে গিয়েছে, তা স্পষ্ট। শুধু তা-ই নয়, ইউক্রেনের হয়ে ইউরোপের কোনও দেশই হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রে নামেনি, কিন্তু গোটা ইউরোপের আগ্নেয়াস্ত্রের নল তাক করে রয়েছে রাশিয়ার দিকে!
রাশিয়া সীমান্তের কাছাকাছি, পূর্ব ইউরোপে তৈরি রয়েছে নেটোর অন্তত ৪০ হাজার সেনা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ মাত্র ৪৬৫০ সেনা সরাসরি নেটোর তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ছিল। এখন তা সংখ্যায় ১০ গুণ। রাশিয়াকে ঘিরে থাকা লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড ও এস্টোনিয়ায় নিযুক্ত ছিল ওই দলটি। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে ওই চারটি দেশ ছাড়াও স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ায় নতুন চারটি যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। নেটোর বাহিনী তৈরি রয়েছে সেখানেও। পোল্যান্ড তার সেনা-সংখ্যা বাড়িয়ে ১০১০ থেকে ১০,৫০০ করেছে। এ ছাড়া, ইউরোপ জুড়ে আমেরিকার অন্তত ১ লক্ষ সেনা নিযুক্ত রয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গোড়া থেকে হুমকি দিয়ে আসছেন, ইউক্রেনকে যে সব দেশ সাহায্য করছে, তাদের চরম পরিণতি ভুগতে হবে। পরমাণু অস্ত্রের ভয় দেখিয়েছে মস্কো। নেটোয় যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে শাসিয়েছে। তাতে ফল হয়েছে উল্টো। ইউরোপে বহরে আরও বাড়ছে রুশ-বিরোধী সামরিক গোষ্ঠীটি। গোটা ইউরোপে নেটোর বাহিনী দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জেরে প্রতিরক্ষা খাতে আর্থিক বিনিয়োগ নাটকীয় ভাবে বাড়িয়েছে নেটো। নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে সাংগঠনিক নীতি।
আজ নেটোয় যোগ দিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে আবেদন জানাল সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। নেটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ জানান, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে।
তুরস্ক আজও জানিয়েছে, তারা এই দুই দেশের আগমনকে সমর্থন করে না। নেটোর ‘প্রবীণ’ সদস্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইপ এর্দোগান স্পষ্টই বলেন, ‘‘ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে নেটোর সদস্যপদ দেওয়ায় তাঁরা রাজি নন।’’ ব্রিটেন ও আমেরিকা অবশ্য এই দুই দেশের সমর্থনে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘‘এই দুই দেশে গণতন্ত্র রয়েছে, শক্তিশালী সেনাবাহিনী রয়েছে, শক্তিশালী ও স্বচ্ছ অর্থনীতি আছে। কোনটা সঠিক, তা নির্ণয় করার মতো মজবুত নৈতিক বোধ রয়েছে। নেটোর সদস্য হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন, সবই এদের রয়েছে।’’ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বহু আগেই দুই দেশে গিয়ে তাঁর সমর্থন জানিয়ে এসেছে। আলাদা করে দুই দেশের মধ্যে সামরিক চুক্তি করেছে। ফলে ব্রিটেন-আমেরিকার ভোট রয়েছে সুইডেন-ফিনল্যান্ডের ঝুলিতে। তাদের নেটোয় যোগ দেওয়া হয়তো সময়ের অপেক্ষা।