মঙ্গলবার রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘‘ডনবাস দখল এই অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য।’’ ২০১৪ সাল থেকে এই অঞ্চলটি রুশপন্থী বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। যুদ্ধের শুরু হওয়ার বিদ্রোহীরা মনে করছিলেন, এ বার রাশিয়া এসে ওই এলাকাকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করবে। কিন্তু যুদ্ধের ৫৭ দিন কেটে গেলও তা হয়নি।
এর মধ্যেই পূর্ব ইউক্রেনের ডানবাস এলাকা তাদের নজরে। সেখানে সেনা বাড়াচ্ছে রাশিয়া। ফাইল ছবি
বন্দর শহর মারিয়ুপোলকে পুরোপুরি ‘দখল’ করার পর এ বার রাশিয়ার নজর পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস এলাকা। সেখানে নতুন করে হামলা শুরু করেছে মস্কো। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, কিভ থেকে সেনা সরিয়ে এনে ডনবাসের সীমান্ত এলাকায় জমায়েত করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের শহর মারিয়ুপোলকে ‘স্বাধীন’ বলে ঘোষণা করে রাশিয়া। জানিয়েছে, ইউক্রেনের এই শহরকে ‘মুক্ত’ করতে অবশেষে সফল হয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে। এ নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মন্তব্যও প্রকাশ্যে এনেছে সংবাদ সংস্থাটি। পুতিন বলেছেন, ‘‘মারিয়ুপোলকে ‘সফল ভাবে মুক্ত’ করতে পেরে আমি গর্বিত।’’
এর মধ্যেই পূর্ব ইউক্রেনের ডানবাস এলাকা তাদের নজরে। সেখানে সেনা বাড়াচ্ছে রাশিয়া। তবে কি রণকৌশলে বদল আনছে রাশিয়া? কারণ যুদ্ধ শুরুর সময় থেকেই মস্কোর অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর অঞ্চল দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) দখল করা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই লক্ষ্য অধরাই থেকে গিয়েছে। সেই জায়গায় মারিয়ুপোলে হামলার পাশাপাশি কিভ দখলের উদ্দেশে ওই এলাকায় সেনা জমায়েত করেছে রাশিয়া। কিন্তু এ বার কৌশল বদলে ডনবাস সীমান্তে সেনা জমায়েত শুরু করেছে মস্কো।
মঙ্গলবার রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘‘ডনবাস দখল এই অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য।’’ ২০১৪ সাল থেকে এই অঞ্চলটি রুশপন্থী বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। যুদ্ধের শুরু হওয়ার বিদ্রোহীরা মনে করছিলেন, এ বার রাশিয়া এসে ওই এলাকাকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করবে। কিন্তু যুদ্ধের ৫৭ দিন কেটে গেলও তা হয়নি।
ল্যাভরভের দাবি, অভিযানের দ্বিতীয় লক্ষ্য হল, মারিউপুলোকে একেবার ‘অস্তিত্বহীন’ করে দেওয়া। তা করতে ইতিমধ্যে অনেকটাই সফল হয়েছে রুশ সেনা। এ ছাড়া রাশিয়ার রোস্তভ ও ক্রিমিয়ার মধ্যে যে সংযোগকারী সেতু রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে আনাও লক্ষ্য মস্কোর। ওই সেতুটি প্রায় আট বছর আগে ইউক্রেন দখল করেছিল।
আমেরিকার এক প্রতিরক্ষা কর্তার মতে, রাশিয়া পুর্ব ইউক্রেনে ৭৮ ব্যাটেলিয়ান সেনা মজুত করেছে যা সংখ্যার হিসাবে ৭৫ হাজার। জানা গিয়েছে, ওই অঞ্চলে আরও সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক নিয়ে রওনা হওয়ার ছবিও ধরে পড়ছে উপগ্রহ চিত্রে। ডনবাসের একটি দিক ইউক্রনীয়দের জন্য খোলা রেখে (যাতে তারা পিছু হঠতে পারে) বাকি তিন দিক ঘিরে ফেলা হচ্ছে।
৯ মে নাৎসি বাহিনীর পরাজয়কে ‘বিজয় দিবস’ হিসাবে পালন করে রাশিয়া। ওই দিনটিতেই তারা ডনবাস দখল করতে চায়। কিন্তু যে ভাবে তাদের অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশের মনে হচ্ছে ওই সময়ের মধ্যে তারা ডনবাস দখল করতে পারবে না। তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হল যে ভাবে যুদ্ধ বিরোধী ক্ষোভ বাড়ছে, তাতে ওই সময় পর্যন্ত রাশিয়া যুদ্ধ চালাতে পারবে কি না তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে তাঁদের।
তা ছাড়া ইউক্রেনকে ফের একপ্রস্থ সাহায্য দিয়েছে আমেরিকা। সেই সাহায্যে রয়েছে ৮০ কোটি ডলারের প্যাকেজ। যার মধ্যে অস্ত্রর পাশাপাশি রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্ররোধী রেডার। তবে যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়াকে রুখে দিতে হলে আরও ট্যাঙ্কের প্রয়োজন ইউক্রেনের। তা যোগাড় করতে পারলে রাশিয়ার কাজটা আরও কঠিন হবে বলেই মত তাঁদের।