ফাইল চিত্র।
সত্যিই কি মারা গিয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ় মুশারফ? পাকিস্তানি-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আজ দিনভর এই খবর প্রচার করলেও মুশারফের পরিবারের তরফে সন্ধেবেলা টুইটারে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, এই খবর ভুয়ো। এমনকি, তিনি ভেন্টিলেশনেও নেই বলে পারিবারিক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। তবে মুশারফ যে গুরুতর অসুস্থ এবং বেশ কিছু দিন ধরে দুবাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি, তা বিভিন্ন সূত্র থেকেই জানা যাচ্ছে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মারা গিয়েছেন, এই খবর ছড়ালে সন্ধে ৬টা নাগাদ পরিবারের তরফে টুইটারে বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়, ‘‘তিন সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন পারভেজ় মুশারফ। তিনি অ্যামিলয়ডোসিস রোগে আক্রান্ত। তাঁর বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাচ্ছে। এটা পারভেজ় ও আমাদের পরিবারের সকলের পক্ষে অত্যন্ত দুঃসময়। যাতে তিনি একটু স্বস্তি পান, আপনারা সকলে সেই প্রার্থনাই করুন।’’ পরিবারের তরফে এই কথা বলার কিছু ক্ষণ পরেই মুশারফ-ঘনিষ্ঠ তথা দেশের প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ফওয়াদ চৌধরি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘‘একটু আগেই মুশারফের ছেলে বিলালের সঙ্গে কথা হল। তাঁরা সবাই এখন দুবাইয়ে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।’’ বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতির এই চাপানউতোরে পারভেজের শারীরিক অবস্থা সম্বন্ধে ধোঁয়াশা আরও বেড়েছে। রাত পর্যন্ত পরিবার বা পাক সরকারের সূত্রে আর কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্টের জন্ম দিল্লিতে, ১৯৪৩ সালে। দেশভাগের পরে তাঁর পরিবার ও-দেশে চলে যায়। ১৯৯৮-এর অক্টোবর মাসে মুশারফের নাম সেনাপ্রধান পদের জন্য সুপারিশ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফ। সে সময়ে সেনাবাহিনীর উপরে মুশারফের কর্তৃত্ব ছিল খুবই জোরদার। তার পরেরই কার্গিল যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন মুশারফ। এবংসেই সময় থেকে প্রধানমন্ত্রী শরিফের সঙ্গে মুশারফের বিরোধ শুরু হয়। সে বছরই অক্টোবরে দেশের ক্ষমতা দখল করে পাক সেনাবাহিনী। জারি হয় জরুরি অবস্থা। নওয়াজ় শরিফকে সৌদি আরবে ‘স্বেচ্ছা নির্বাসনে’ পাঠিয়ে দেন মুশারফ।
২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন পারভেজ়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নিয়ে ২০০২ সালে সাধারণ নির্বাচনে মত দেন তিনি। দেশে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার’ জন্য পশ্চিমি দুনিয়ার নেকনজরেও পড়ে যান। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র অন্যতম ‘অংশীদার’ ছিলেন তিনি। তবে ২০০৬-এর শেষ থেকে দেশের বিচারবিভাগের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০০৭-এর ২৮ নভেম্বর সেনাবাহিনীর প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেন মুশারফ। গদি বাঁচাতে দেশে ফের জরুরি অবস্থা জারি করেন। কিন্তু এ বার আর জনগণের সমর্থন পাননি। ২০০৮-এর ১৮ অগস্ট প্রেসিডেন্ট পদ থেকেও ইস্তফা দেন তিনি।
২০০৮-এ ব্রিটেন চলে গিয়েছিলেন মুশারফ। ২০১৩-এ নির্বাচন লড়তে দেশে ফিরলেও বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় গ্রেফতার হন মুশারফ। নিজের ফার্মহাউসেই গৃহবন্দি করে রাখা হয় তাঁকে। চিকিৎসার জন্য ২০১৬ সালে তাঁকে দুবাই যাওয়ার অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সে বছর মার্চ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেই রয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে যদিও প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করেছে ইসলামাবাদ। দেশদ্রোহের অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে যদি মুশারফের মৃত্যু হয়, তা হলে তাঁর মৃতদেহ ইসলামাবাদের ডি-চকে ঝুলিয়ে রাখা হবে, এইরায় দিয়েছিল পাকিস্তানের সন্ত্রাস-দমন আদালত।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।