Rishi Sunak

কুড়ি মাসে বিতর্কই সঙ্গী ছিল সুনকের

বিদায়ী ভাষণে সবার প্রথমে দেশবাসীর কাছে ‘ক্ষমা’ চেয়েছেন ঋষি। বেশ কয়েক বার ‘সরি’ শব্দটির ব্যবহারও করেছেন। ব্রিটেনের আম জনতার এই রায় তিনি আর দল মাথা পেতে নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৯
Share:

ঋষি সুনক। —ফাইল চিত্র।

তড়িঘড়ি নির্বাচনী নির্ঘণ্ট যখন এগিয়ে এনেছিলেন, তাঁর নিজের দলের বহু নেতাই সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। বরং কনজ়ারভেটিভ নেতাদের একাংশের দাবি ছিল, চলতি বছরের অক্টোবরের বদলে সামনের বছর ব্রিটেনে ভোট হলে তাঁদের দলের ফলাফল অনেক ভাল হতে পারে। কিন্তু দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ভোট পিছনোর বদলে তা আরও তিন মাস এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন। যার ফল আজ ভোর থেকেই স্পষ্ট। মাত্র কুড়ি মাস ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর গদি সামলে আজ সকালেই সপরিবার ১০ ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়তে হয়েছে কনজ়ারভেটিভ দলের নেতা ঋষি সুনককে। এ বারের ভোটে ৪১২ আসনে জয় পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি। ঋষির নেতৃত্বে কনজ়ারভেটিভদের এই পরাজয় ব্রিটিশ রাজনীতির ইতিহাসে এক দিক থেকে ‘রেকর্ড’ সৃষ্টি করেছে বলে চর্চা শুরু হয়েছে ওয়েস্টমিনস্টারে।

Advertisement

বিদায়ী ভাষণে সবার প্রথমে দেশবাসীর কাছে ‘ক্ষমা’ চেয়েছেন ঋষি। বেশ কয়েক বার ‘সরি’ শব্দটির ব্যবহারও করেছেন। ব্রিটেনের আম জনতার এই রায় তিনি আর দল মাথা পেতে নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।

অথচ রাজনীতির ময়দানে সুনকের প্রাথমিক উত্থান পর্বটা ছিল একেবারেই মসৃণ। ইয়র্কশায়ারের অন্যতম ‘নিরাপদ’ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত রিচমন্ড থেকে দাঁড়িয়ে প্রথম বার ভোটে জিতেছিলেন তিনি। সেই আসন থেকে অবশ্য এ বারও জয় পেয়েছেন সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। ব্রেক্সিটকে সমর্থন করে প্রাথমিক ভাবে দলে বিপুল জনপ্রিয়তা পান সুনক। বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রিত্বে ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রীর পদও পান দ্রুত। কিন্তু তার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছে ঋষির নাম। কোভিড চলাকালীন বরিসের বিতর্কিত ‘পার্টিগেট কেলেঙ্কারি’তে নাম জড়ানো থেকে শুরু করে সুনকের ‘ইট আউট টু হেল্প আউট’ নীতিও তুমুল সমালোচিত হয়। এমনকি ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বরিসের প্রস্থানের পিছনে তাঁরই অতি-ঘনিষ্ঠ সুনকের হাত ছিল বলেও মনে করতেন টোরিদের একাংশ।

Advertisement

তবে বরিস-বিদায়ের পরেও সহজে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসতে পারেননি সুনক। কনজ়ারভেটিভদের একটা বড় অংশই তাঁকে নিজেদের নেতা হিসেবে মানতে পারেননি। আর ঠিক সেই কারণেই বরিস ইস্তফা দিতে লিজ় ট্রাস হন কনজ়ারভেটিভদের নেত্রী। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর গদিতেও তিনিই বসেন। তবে তাঁর সরকার সেই সময়ে চরম আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলে মাত্র ৬ সপ্তাহেই ইস্তফা দেন লিজ়। এর পরেই ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে সুনকের পাকাপাকি ভাবে থাকার রাস্তা প্রশস্ত হয়।

সেই রাস্তাটা অবশ্য মসৃণ ছিল না মোটেই। ২০১৬ থেকে তত ক্ষণে পাঁচ জন প্রধানমন্ত্রীর শপথ দেখে ফেলেছেন ব্রিটেনবাসী। ২০২২-এর শেষের দিকে সুনক যখন প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসছেন, তারও অনেক আগে থেকে ব্রিটেনের আর্থিক বৃদ্ধির হার নামতে শুরু করেছে। শিশুদের মধ্যে দারিদ্র বাড়ছে, বাড়ছে গৃহহীনদের সংখ্যাও। সেই সঙ্গে ফুড ব্যাঙ্কগুলির উপরে নির্ভরতাও বাড়ছিল। অভিবাসন আর আয়কর নীতি নিয়েও তখন চরম নাজেহাল সরকার।

এর সঙ্গেই যোগ হয়েছিল ঋষির নিজের পরিবারের আর্থিক অবস্থা আর স্ত্রী অক্ষতার বিপুল সম্পত্তি নিয়ে নানা বিতর্ক। কখনও প্রধানমন্ত্রীর টাই তো কখনও তাঁর জুতোর দাম নিয়ে চর্চা চলত ব্রিটিশ রাজনীতিতে। এত বিপুল সম্পত্তির মালিক বলেই তিনি ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট আর আর্থিক দুরবস্থার কথা বুঝতেন না বলে হামেশাই লেবার নেতাদের কটাক্ষের মুখোমুখি হতে হত ঋষিকে। যদিও মূল্যবৃদ্ধির হার খানিকটা হলেও কমাতে সক্ষম হয়েছিল সুনক সরকার। তবে সেটা ভোটে জেতার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না, বলে দিল আজকের ফলাফল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement