Anti-Hijab Protests

মুখে-ঘাড়ে ছ’টি গুলি, ইরানে হত প্রতিবাদী তরুণী

ইরান সরকার তার দমনপীড়নের মাত্রাও বাড়াচ্ছে ক্রমশ। ইরান হিউম্যান রাইটসের মতে, সরকারি পুলিশ ও বাহিনীর হাতে ইরানে এখনও অন্তত ৭৬ জন বিক্ষোভকারী মারা গিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

তেহেরান শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:০০
Share:

মাহশা আমিনির ছবি নিয়ে প্রতিবাদে শামিল সিরিয়ার নারীরা। কামিশলি শহরে। পিটিআই

ইরানের হিজাব-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ২০ বছরের হাদিস নাজাফি। মিছিলে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে প্রাণ গিয়েছে তাঁর। জানা গিয়েছে, প্রথমে মারধর করে তার পরে তাঁর মুখে, বুকে ও ঘাড়ে ছ’বার গুলি করেছে ইরানের সরকারি বাহিনী।

Advertisement

ঘটনাটি সামনে আসার পরেও অবশ্য এতটুকু ভাটা পড়েনি ইরানের হিজাব-বিরোধী গণআন্দোলনে। বরং ক্ষোভের আগুন আরও ছড়িয়ে পড়েছে দেশের নানা প্রান্তে। যা দমন করতে ইরান সরকার তার দমনপীড়নের মাত্রাও বাড়াচ্ছে ক্রমশ। ইরান হিউম্যান রাইটসের মতে, সরকারি পুলিশ ও বাহিনীর হাতে ইরানে এখনও অন্তত ৭৬ জন বিক্ষোভকারী মারা গিয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে ১২০০ জনকে। সরকারি মতে নিহতের সংখ্যা ৪১ ও গ্রেফতার হয়েছেন ৭৩৯ জন। ইরান সরকারের দাবি, এই আন্দোলনকে মদত দিচ্ছে ‘কোমলা’ বলে ইরানের একটি বামপন্থী সংগঠন এবং বেশ কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী। ইতিমধ্যেই ইরানের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশ থেকে একাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর।

ইরানের মতো কঠোর ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞায় ঘেরা দেশের মেয়েদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের অন্যত্রও। ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের পরে বিদ্রোহ ছড়াল আরব দুনিয়ার সিরিয়াতেও। উত্তর সিরিয়ার কুর্দিশ মহিলারা এ বারে প্রকাশ্যে চুল কেটে, হিজাব পুড়িয়ে সমর্থন জানিয়েছেন ইরানের মেয়েদের। মুখে মাহশার মৃত্যু নিয়ে প্রতিবাদের স্লোগান। আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ার গোল্ডেন গেট ব্রিজে বহু মানুষ মানবশৃঙ্খল বানিয়ে হিজাব-বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন।

Advertisement

আন্দোলনের এই রূপের সঙ্গে মিলে গিয়েছে প্রতিবাদের গান ‘বেলা চাও’। উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ, উত্তর ইটালির ধান খেতগুলিতে অমানুষিক পরিশ্রম ও স্বল্প মজুরি নিয়ে প্রতিবাদের গান বাঁধলেন মহিলা কৃষি-শ্রমিকেরা। ১৯৪৩ সালে সেই প্রতিবাদের গান ‘বেলা চাও’ (আক্ষরিক অর্থ বিদায় সুন্দরী) জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইটালির ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনকারীদের গলায়। সেই গান ফের উঠে এল ২০২২ সালে, হয়ে উঠল ইরানের আন্দোলনের অংশ। ইরানের দুই বোন সামিন ও বেহিন বোলুরির ফার্সি অনুবাদে গাওয়া গানটি ঝড় তুলেছে সমাজমাধ্যমে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছরের মাহশা আমিনির মৃত্যুর খবর পেয়েই ইনস্টাগ্রামে গানটি আপলোড করেন দুই বোন। কমপক্ষে ৫০ লক্ষ জন দেখেছেন ভিডিয়োটি। একের পর এক ইরানবাসী গানটির সমর্থনে মন্তব্য করেছেন— ইরানের মেয়েদের স্বাধীনতা অর্জনের এই লড়াইয়ে এই গানটিই উপযুক্ত।

বলপ্রয়োগ করেও আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে সরকার বেছে নিয়েছে অন্য পথ। হিজাব-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে হিজাব-পন্থী আন্দোলনের মুখোমুখি টক্করের জমি তৈরি করছে সে দেশের সরকার। গণ টেক্সট মেসেজ ও প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে হিজাবের সমর্থনে জনমত তৈরি করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, হিজাব-পন্থী আন্দোলনের সমর্থকেরা ধর্মীয় চিহ্নকে তাঁদের আন্দোলনের প্রতীক বানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, হিজাব মেয়েদের সম্মান ও অধিকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement