চারিদিকে শুধু হাহাকার আর মৃত্যু। ছবি— রয়টার্স।
যে গুদামে শনিবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, তার পাঁচিলের গায়ে চায়ের দোকান মহম্মদ হানিফের। আগুন তখনও এ দিকে ছড়ায়নি। বহু কর্মী জড়ো হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন কারখানার এই দক্ষিণ পশ্চিম দিকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে একটি বেশ পোক্ত মই হাতে পান হানিফ। কিন্তু পাঁচিলের তুলনায় অনেক ছোট সেটি। সেটি তিনি আটকে থাকা শ্রমিকদের দিয়ে দেন। তাই বেয়ে পাঁচিলের উপরে ওঠার পরে নিজের পিঠকে মইয়ের ধাপ হিসেবে ব্যবহার করতে দেন হানিফ। পাঁচিল থেকে পিঠে লাফ দিয়ে পড়ে তার পরে মাটিতে নামেন এক এক করে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক।
হানিফ ও তাঁর কাঠের মই এখন নায়ক। বেঁচে ফেরারা বুকে জড়িয়ে ধরছেন হানিফ ভাইকে। কিন্তু এই আগুন বাংলাদেশের এক আলাদা পরিচয়কে সর্বসমক্ষে আনল। শনিবার আগুন লাগা মাত্রই সমাজমাধ্যমে অনেকে ডাক দেন, ‘হাজার হাজার বোতল রক্ত লাগবে। আপনারা সবাই তৈরি থাকুন।’ রবিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে দীর্ঘ লাইনে শুধুই তরুণদের ভিড়। সবাই এসেছেন রক্ত দিতে। আর এক দল স্বেচ্ছাসেবী পোড়া গুদাম থেকে উদ্ধার হওয়া আহতদের বয়ে বয়ে হাসপাতালে আনার জন্য প্রতিটি মুহূর্ত দৌড়চ্ছেন। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে ভাড়া নেননিএলাকার রিকশা ও অটোর চালকেরাও।বেসরকারি সব অ্যাম্বুল্যান্স শনিবার রাতেই চলে গিয়েছিল সীতাকুণ্ডে। রবিবার রাত পর্যন্ত একটানা কাজ করে গিয়েছেন চালক ও তাঁদের সহকারীরা।
ধর্ম ও রাজনীতির সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করে, বিপদকে তুচ্ছ করে সর্ব স্তরের মানুষের নিঃস্বার্থ এগিয়ে আসাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে সমাজমাধ্যম। অনেকে বলছেন, শেষ বার এই চোয়ালচাপা রোখ দেখা দিয়েছিল ঢাকায় শাহবাগের চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চের স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থানে, ক্রমে যা এই আগুনের মতোই বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শাসকেরা রাজাকারদের প্রতি নরম মনোভাব ছুড়ে ফেলতে বাধ্য হয়।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।