ম্যাচ দেখতে আসা স্টেডিয়ামের দর্শকদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের পাত্র হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ছবি এপি।
দিনটা শুরু হয়েছিল আইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির মৃত্যুর খবর ঘোষণা দিয়ে। হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক বৈঠকে সেই ঘোষণা করে নিজের ‘সাফল্য’ বড় করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সাফল্যের গরিমা অবশ্য স্থায়ী হল না। ওয়াশিংটনে একটি বেসবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে দর্শকদের বিদ্রুপ শুনতে হল তাঁকে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সাম্প্রতিকতম সাফল্যের থেকে তাঁর সমালোচকদের কাছে বড় হয়ে উঠল শরণার্থীদের নিয়ে প্রেসিডেন্টের নানা দমনমূলক নীতি এবং টুইটারে তাঁর ভাষা ব্যবহার।
নিজে ভাল বেসবল খেলতেন। নিউ ইয়র্ক মিলিটারি অ্যাকাডেমি টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন এক সময়ে। নিয়মিত এই খেলার ধারাবিবরণীও করতেন। কিন্তু দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বার বেসবল ম্যাচ দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর হল না। উল্টে ম্যাচ দেখতে আসা স্টেডিয়ামের দর্শকদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের পাত্র হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও মুখে হাসি নিয়েই গত কাল সব টিটকিরি সহ্য করলেন ট্রাম্প।
রবিবার রাতে ওয়াশিংটনের ন্যাশনালস পার্কে কোনও অভ্যর্থনা তো পেলেনই না ট্রাম্প, উল্টে দর্শকদের একাংশ রব তুললেন, ‘লক হিম আপ’। ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারে তাঁর সমর্থকেরাই যা বলতেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনকে (লক হার আপ)। কেউ কেউ আবার ‘ইমপিচ ট্রাম্প’ লেখা ব্যানারও দেখালেন।
এখন বেসবলের ওয়ার্ল্ড সিরিজ চলছে। কাল পঞ্চম খেলা ছিল ওয়াশিংটন ন্যাশনালস এবং হিউস্টন অ্যাস্ট্রোস-এর মধ্যে। সাদা শার্ট, গাঢ় নীল ব্লেজার আর লাল রঙা স্ট্রাইপ টাই পরে খেলা শুরুর আগেই স্টেডিয়ামে হাজির হন ট্রাম্প। সঙ্গে স্ত্রী মেলানিয়া এবং মার্কিন কংগ্রেসের বেশ কিছু রিপাবলিকান সদস্য। কিন্তু প্রেসিডেন্টকে ‘ফার্স্ট পিচ’ (সম্মাননীয় অতিথিকে খেলা শুরুর প্রথম বল করতে দেওয়া)-এ অংশ নিতে দেননি স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। উল্টে প্রবল ট্রাম্প-বিরোধী হিসেবে পরিচিত বিশ্বখ্যাত শেফ হোসে অন্দ্রেকে সেই দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়। স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ট্রাম্পের খেলা দেখতে আসার খবর পাওয়ার অনেক আগে ওই শেফকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ফলে ট্রাম্পের জন্য ‘অন্য ব্যবস্থা’ করা যায়নি।
প্রেসিডেন্ট যে স্টেডিয়ামে উপস্থিত, সে খবর দর্শকদের জানানোও হয় খেলার তৃতীয় ইনিংসে। বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেওয়া সৈনিকদের যে সময়ে সম্মান জানানো হয়, সেই সময়ে ট্রাম্পকে স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ দর্শকই বিদ্রুপ করেন ট্রাম্পকে। মূলত প্রেসিডেন্টের অভিবাসন নীতির জন্যই তাঁকে এ ভাবে প্রকাশ্যে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। হোসে অন্দ্রে-ও ট্রাম্পের শরণার্থী নীতি নিয়ে তাঁকে বহু বার বিঁধেছেন। পুয়ের্তো রিকোয় হারিকেনে বহু মানুষের মৃত্যুর দায়ও সরাসরি প্রেসিডেন্টের উপরেই চাপিয়েছিলেন তিনি।
তবে স্বয়ং প্রেসিডেন্টের খেলা দেখতে আসা যে দর্শকেরা ভাল ভাবে নেবেন না, সেটা নাকি আগে থেকেই আঁচ করা গিয়েছিল। হোয়াইট হাউসের এক আধিকারিক অন্তত তেমনটাই জানালেন। ২০১৬-র নির্বাচনে ট্রাম্প মাত্র চার শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন ওয়াশিংটন থেকে। ফলে এখানে তাঁর জনপ্রিয়তা ঠিক কতটা, প্রেসিডেন্ট নিজেও তা ভাল ভাবেই জানেন। তা ছাড়া, সেলিব্রিটি দর্শকদের এই ধরনের বিদ্রুপ করার চলও রয়েছে আমেরিকার বেসবল স্টেডিয়ামগুলোয়। ফলে কালকের গোটা ম্যাচ হাসিমুখেই দেখেন প্রেসিডেন্ট। উল্টে বিদ্রুপের মুখে তাঁকে শান্ত ভাবে হাততালিও দিতে দেখা গিয়েছে বেশ কয়েক বার। যদিও কোন দলকে সমর্থন করছেন, তা প্রকাশ করেননি একেবারেই।