Coronavirus

এখানে কিন্তু সবাই ইঁদুর-বাদুড় খান না

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যে এত মারাত্মক চেহারা নেবে, সার্সের থেকে এই সংক্রমণে মৃত্যু অনেক বেশি হয়ে যাবে, তা মনে হয় কেউই বুঝতে পারেনি।

Advertisement

চন্দ্রচূড় পাল

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:১৪
Share:

ছবি রয়টার্স।

দু’সপ্তাহ ধরে সমানে অসংখ্য প্রশ্ন আর মন্তব্যের সামনে পড়ছি। সোশ্যাল মিডিয়া, হোয়াটসঅ্যাপ বা সোজাসুজি ফোনে। ঘুরে-ফিরে সকলের মুখেই এক কথা— কী প্রয়োজন চিনে পড়ে থাকার। ইঁদুর-বাদুড় ভাজা খায় এ-দেশের মানুষজন। এই করোনা-আতঙ্কে বাঙালির ছেলের সেখানে থাকার দরকার কী!

Advertisement

কর্মসূত্রে চিনের সাংহাই শহরেই আমার দ্বিতীয় ঘর। বললেই তো আর ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না। আর সত্যি কথা বলতে কী, এখানকার সবাই ইঁদুর-বাদুড় খান, এ কথাটাও ঠিক নয়। চিনের কিছু কিছু জায়গায় কাঁচা বা কম রান্না করা জিনিস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে ঠিকই। কিন্তু ‘লাইভ মার্কেট’ বা ‘জ্যান্ত খাবারের রেস্তরাঁ’র সংখ্যা আস্তে আস্তে কমে আসছে। আর এখানে আমার মতো প্রবাসীরা তো কাঁচা খাবার বা বাদুড় ভাজা ভুলেও চেখে দেখেন না! তাই সংক্রমণের মোকাবিলার সঙ্গে সঙ্গে গুজবের মোকাবিলাও করতে হচ্ছে আমাদের।

তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যে এত মারাত্মক চেহারা নেবে, সার্সের থেকে এই সংক্রমণে মৃত্যু অনেক বেশি হয়ে যাবে, তা মনে হয় কেউই বুঝতে পারেনি। সাধারণ মানুষ তো নয়ই, প্রশাসনও নয়। কিন্তু সরকার যে ভাবে সব কিছু সামলানোর চেষ্টা করছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

Advertisement

যেমন, আমাদের এই শহর সাংহাই। রাস্তাঘাটে, প্রতিটা পাড়ায়, আবাসনগুলির বাইরে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ও নানা ধরনের ডিজ়ইনফেকট্যান্ট নিয়ে। আবাসনে ঢোকা-বেরোনোর সময়ে, মেট্রো স্টেশনে, বিমানবন্দরে— সব জায়গাতেই তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কারও অসুস্থতার আভাস পেলেই তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হুবেই প্রদেশের মতো বেশ কয়েকটি জায়গা, যেখানে সংক্রমণ সব থেকে বেশি, সেখান থেকে আপাতত সাংহাইয়ে প্রবেশ নিষেধ। অন্য কোনও জায়গা থেকে এ শহরে যাঁরা আসছেন, তাঁদের ১৪ দিন ‘গৃহবন্দি’ থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মানে, খুব দরকার না হলে বাড়ির বাইরে বেরোতে বারণ করা হচ্ছে বাইরে থেকে আসা মানুষদের। কারণ এই ভাইরাসের ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’ ১৪ দিন। ফলে দু’সপ্তাহেই বোঝা যাবে কারও দেহে করোনার সংক্রমণ রয়েছে কি না।

শহরের তিনটে মূল রেল স্টেশনে চলছে বিশেষ নজরদারি। যেমন হুংচাও স্টেশনে বসানো হয়েছে ১৬টি ‘থার্মাল চেক পয়েন্ট’। ৫০ জন চিকিৎসক ও নার্স, ১৬০ জন পুলিশ ও ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল স্টেশনে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। গত তিন সপ্তাহে কারা কারা হাসপাতাল বা সংক্রমণ-প্রবণ এলাকায় গিয়েছেন, কৃত্রিম মেধার সাহায্যে সেই তথ্য বার করে তাঁদের আলাদা রাখার চেষ্টাও করা হচ্ছে। মার্চ পর্যন্ত বন্ধ সব স্কুল।

চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের অনুমান, ফেব্রুয়ারির ২০-২৫ তারিখে করোনাভাইরাসের প্রকোপ সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠতে পারে। তার পরে সংক্রমণ কমবে বলেই অনুমান তাঁদের। আমরাও নিশ্চিত যে, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনই জয়ী হবে। তবু সমবেদনা সেই সব মানুষকে, যাঁরা এই যুদ্ধে স্বজন হারালেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement