স্কাইডাইভিং করছেন ন্যাথি। ছবি: ফেসবুক।
ধ্যান-জ্ঞান-নেশা-ভালবাসা, ‘অ্যাডভেঞ্চার’ই ছিল তাঁর সব কিছু। তাই বিদেশে ঘুরতে গিয়ে সবার অলক্ষ্যে বেআইনি ভাবে উঠে গিয়েছিলেন আকাশছোঁয়া এক বহুতলের ২৯ তলায়। উদ্দেশ্য, স্কাইডাইভিং। নীচে রাস্তায় ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর বন্ধু, পুরোটা ভিডিয়ো রেকর্ড করবেন বলে। সব প্রস্তুতি সারা বুঝে ঝাঁপ দেন ৩৩ বছরের ন্যাথি ওডিনসন। কে জানত, সেই ঝাঁপই হবে তাঁর জীবনের শেষ অ্যাডভেঞ্চার!
ন্যাথি ব্রিটেনের কেমব্রিজশায়ারের হান্টিংডনের বাসিন্দা। সম্প্রতি এক বন্ধুর সঙ্গে থাইল্যান্ডের পাটায়াতে ঘুরতে গিয়েছিলেন যুবক। নিরাপত্তা আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ন্যাথি তার গাড়িটি একটি বহুতলের বাইরে পার্ক করে ভিতরে এসে লুকিয়ে ছিলেন। তার পর চুপি চুপি উঠে যান ভবনের ২৯ তলায়। তাঁর পিঠে বাঁধা ছিল প্যারাস্যুট। কথা ছিল, ন্যাথি লাফ দেবেন, আর সেই দৃশ্য ভিডিয়ো রেকর্ড করবেন তাঁর বন্ধু। সেই মতোই লাফ মারেন যুবক।
কিন্তু তাঁর পিঠে বাঁধা প্যারাস্যুটটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে খোলেইনি। ফলে লাফ দেওয়ার পর ন্যাথি প্রথমে পড়েন একটি গাছে, তার পর সোজা এসে পড়েন রাস্তায়। স্বভাবতই হুলস্থুল পড়ে যায় এলাকায়। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে এসে ন্যাথিকে পরীক্ষা করে দেখে মৃত বলে ঘোষণা করেন প্যারামেডিকরা।
পাটায়ায় ন্যাথির এমন কাজ এটাই নাকি প্রথম বার নয়। দুর্ঘটনার কথা শুনে এক জন নিরাপত্তারক্ষী জানিয়েছেন, ন্যাথি এর আগে বেশ কয়েক বার বহুতল থেকে লাফ দিয়েছেন। তাঁর সেই ‘স্টান্ট’ দেখে নীচে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীরা হতবাক হয়ে যেতেন।
ব্যাং লামুং জেলা থানার উপ-পরিদর্শক লেফটেন্যান্ট কমলপর্ন নাদি জানিয়েছেন, ন্যাথি যে প্যারাস্যুটটি নিয়ে লাফ দিয়েছিলেন, সেটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল, যে কারণে সেটি খোলেনি। ব্রিটিশ যুবকের যে বন্ধু তাঁর লাফ দেওয়ার ভিডিয়ো রেকর্ড করেছিলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং প্রমাণ হিসাবে ভিডিয়োটি পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাদি। এ ছাড়া ফরেন্সিক আধিকারিকরা সব তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখছেন। তাঁরা প্যারাস্যুটটিও পরীক্ষা করে দেখছেন।
পুলিশ ইতিমধ্যেই ব্যাংককের ব্রিটিশ দূতাবাসকে জানিয়েছে ঘটনাটি, ন্যাথির আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
সংবাদ সংস্থা বিবিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ন্যাথি এক জন অভিজ্ঞ প্যারাস্যুটিস্ট ছিলেন এবং সমাজমাধ্যমে নিয়মিত তাঁর দুঃসাহসিক কীর্তির ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করতেন। ‘ন্যাথি’স স্কাই ফটোগ্রাফি’ নামে ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক পেজ ছিল তাঁর, যেখানে এই সমস্ত ছবি এবং ভিডিয়ো রয়েছে। তাঁর একটি স্কাই ফোটোগ্রাফি সংস্থাও রয়েছে। সেখান থেকে ব্যক্তিগত স্কাই ডাইভে নিয়ে যেতেন উৎসাহীদের।