পাক প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আগামী ৬ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচন হতে পারে পাকিস্তানে। ওই দিনে ভোট করানোর সুপারিশ করে পাক প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি বুধবার চিঠি দিয়েছেন সে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সিকন্দর সুলতান রাজাকে। কয়েক দিন ধরেই জল্পনা চলছিল, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগ করে আলভি একতরফা ভাবে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ‘বল’ নির্বাচন কমিশনের ‘কোর্টে’ ঠেলে আলভি সেই জল্পনায় জল ঢাললেন বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনকে প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, গত ৯ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শে তিনি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’ ভেঙে দিয়েছেন। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের কথা সংবিধানের ৪৮(৫) অনুচ্ছেদে বলা আছে। সেই সময়সীমা মেনে ৯ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করানো উচিত। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টকে দেওয়া হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহে পাক সেনাবাহিনী ‘রাজনৈতিক সক্রিয়তা’ বৃদ্ধি করায় নির্বাচন আদৌ হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনও অবস্থাতেই পাক সেনা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরানের খানের দল ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ (পিটিআই)-কে ক্ষমতায় ফিরতে দেবে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা। পাকিস্তানে এখন ক্ষমতায় আছে সেনাবাহিনীর মদতে পুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সাধারণ নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা, এবং নতুন সরকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত অর্থনীতিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখাই তার কাজ।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তদারকি প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার-উল-হক-কাকর অর্থনীতির হাল ফেরাতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কার করতে সচেষ্ট। অন্য দিকে, সেনার মদতে চলছে ইমরানের দল পিটিআর-কে ভাঙার কাজ। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এখন ভোট হলে ইমরানের দলই ক্ষমতা দখলের দৌড়ে এগিয়ে থাকবে। যা পাক সেনা মানবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, পাক নির্বাচন কমিশন আগে জানিয়েছিল, ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’র নির্বাচন করতে হবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ— জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত অর্ধেক সময়েই পাকিস্তান দেশটি সেনাবাহিনীর শাসনাধীন থেকেছে। বাকি সময় অসামরিক সরকার থাকলেও, তা কার্যত সেনার মদতেই টিকে থেকেছে। সেনার বিরাগভাজন হয়ে ইস্কান্দার মির্জা, জুলফিকর আলি ভুট্টো, নওয়াজ শরিফ, বেনজ়ির ভুট্টো, ইমরান খানের মতো অসামরিক শাসকেরা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এ বারও পাক রাজনীতিতে সেনা-নির্ভরতার ধারা বজায় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।