ফের বিপাকে ইমরান খান সরকার। —ফাইল চিত্র।
হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল বছরের গোড়াতেই। তা সত্ত্বেও সন্ত্রাস দমনে উপযুক্ত পদক্ষেপ করেনি পাকিস্তান। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই তাদের কালো তালিকাভুক্ত করল দ্য ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর অধীনস্থ দ্য এশিয়া পেসিফিক গ্রুপ (এপিজি)। আগামী এক মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে উদ্যোগী না হলে, অক্টোবরে বড় ধরনের আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে তাদের। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছেন এফএটিএফ-এর এক আধিকারিক।
বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের অর্থের জোগান-সহ আর্থিক তছরুপ বা জালিয়াতি, দুর্নীতির মতো বিষয়ে নজরদারি ও তদারকি করে এফএটিএফ। ২০১৮-র জুন মাসে পাকিস্তানকে ‘গ্রে’ তালিকাভুক্ত করেছিল তারা। সেই সময়ে ২৭টি ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়, যার অন্যতম ছিল সে দেশে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও জঙ্গিদের যাবতীয় আর্থিক মদতের রাস্তা বন্ধ করা। ১৫ মাস সময় দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানকে। তার মধ্যে সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিক মানের সমতুল্য পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল।
আগামী মাসেই সেই সময়সীমা শেষ হতে চলেছে। তার আগে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় দু’দিনব্যাপী বৈঠকে বসে এফএটিএফ-এর ৪১ সদস্যের প্লেনারি। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক প্রধান-সহ ১০ জনের একটি প্রতিনিধিদলকে সেখানে পাঠিয়েছিল ইসলামাবাদ। সন্ত্রাস দমনে ইমরান খান সরকার এখনও পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা নিয়ে তাঁদের উপস্থিতিতেই সবিস্তার আলোচনা হয়। কিন্তু তাতে দেখা যায়, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও জঙ্গিদের আর্থিক সাহায্য এবং আর্থিক তছরুপ রোখার যে মাপকাঠি তৈরি করা হয়েছিল, তার ৪০টি শর্তের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩২টিই পূরণ করে উঠতে পারেনি তারা। তার পরই পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে কথা বলে কোনও লাভ নেই: ইমরান
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে লড়তে হবে ভারতকেও: ট্রাম্প
এফএটিএফ কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় পাকিস্তানের বিপদ আরও বাড়ল। আগামী এক মাসের মধ্যে সন্ত্রাস দমনে কড়া ব্যবস্থা নিতে না পারলে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপবে তাদের উপর। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার(আইএমএফ), বিশ্বব্যাঙ্ক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো সংস্থার কাছ থেকে আর আর্থিক সাহায্য পাবে না তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ আর যে যে দেশের কাছ থেকে অনুদান মেলে, বন্ধ হয়ে যাবে তা-ও।
এর আগে, গত জুনেও পাকিস্তানকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিল এফএটিএফ, যার পর তড়িঘড়ি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ২০টি জঙ্গি শিবির বন্ধ করে দেয় ইমরান খান সরকার। কিন্তু লস্কর-ই-তইবা প্রধান হাফিজ সইদ এবং জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহার-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে। পাকিস্তান সরকার যদিও দাবি করেছে, লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ, জামাত-উদ-দাওয়া, ফালাহ্-ই-ইনসানিয়তের মতো সংগঠনের দখলে থাকা সাতশোর বেশি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে তারা। তবে একাধিক নাশকতামূলক হামলায় অভিযুক্ত ওই সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়ায়, তাদের যুক্তি খারিজ করেছে ভারত এবং এফএটিএফ-এর অন্য সদস্য দেশগুলি।