ছবি: রয়টার্স।
পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আপত্তি নেই ভারতের। তবে পাকিস্তানকে ‘টেররিস্তান’ অ্যাখ্যা দিয়ে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তব্য, সন্ত্রাসে মদত দেওয়া দেশের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার ঘোর বিরোধী ভারত। তাঁর দাবি, কাশ্মীর ইস্যুর মোকাবিলায় সন্ত্রাসবাদকে ঘিরে একটা ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করে ফেলেছে পাকিস্তান।
বুধবার নিউ ইয়র্কে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভায় পাকিস্তানকে তীক্ষ্ণ ভাষায় আক্রমণ করেছেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী। দু’দেশের মধ্যে আলোচনার বিষয় হিসাবে কাশ্মীর ছাড়াও আরও বড় ইস্যু রয়েছে বলে মত তাঁর। এবং তা হল সন্ত্রাসবাদে পড়শি দেশের মদত জুগিয়ে চলা। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ বা রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাঙার ফলে ভারতের বাইরের মানচিত্রে যে রদবদল ঘটেনি, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
তবে কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তের পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল পাকিস্তান। ভারতের সঙ্গে কূটনেতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা ছাড়াও এ দেশ থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেয় ইমরান খান সরকার। বিশ্বের দরবারে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেও নরেন্দ্র মোদী সরকার বরাবরই বলে এসেছে, কাশ্মীর প্রসঙ্গটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ দিন জয়শঙ্করও সে কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিজেদের বর্তমান সীমানার ভিতরের অংশে কিছুটা রদবদল ঘটাচ্ছি। এতে পাকিস্তান প্রতিক্রিয়া জানায়। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চিনও। তবে ওই প্রতিক্রিয়া দুটো ভিন্ন। কাশ্মীর ইস্যুর মোকাবিলায় সন্ত্রাসবাদকে ঘিরে সত্যিই একটা গোটা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছে পাকিস্তান। এটা কাশ্মীরের থেকেও বড় ইস্যু। এবং সেটা ভারতের জন্যই তৈরি করেছে তারা।”
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকায় হতাশ, কাশ্মীর নিয়ে মোদীর উপর এখনও কোনও চাপ নেই: ইমরান
জয়শঙ্করের দাবি, সন্ত্রাসবাদে মদতের ৭০ বছরের ‘বিনিয়োগ’ ব্যর্থ হওয়াতেই কাশ্মীর প্রসঙ্গে এতটা ক্ষুব্ধ, হতাশাব্যঞ্জক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই ওই শিল্পের (সন্ত্রাসবাদের) পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে ওরা।’’
আরও পড়ুন: বিশ্বাস করি, মোদী মুসলিম মৌলবাদ মোকাবিলা করতে পারবেন, বললেন ট্রাম্প
পাকিস্তানকে সতর্কতার বার্তাও দিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘যে (সন্ত্রাসের) কাঠামো নিজেদের জন্য গড়ে তুলেছে তারা, তা অচল হয়ে গিয়েছে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসবাদের ভিত্তিতে তৈরি নীতিগুলি রাষ্ট্রের বৈধ নীতি হিসাবে চালানো যায় না। এটাই মূল সমস্যা।’’
বিদেশমন্ত্রীর দাবি, ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরকে সাময়িক বা অস্থায়ী সময়ের জন্য বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। এবং তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খুব একটা বেশি উল্লেখ করা হয় না বলেও দাবি করেন জয়শঙ্কর। তাঁর কথায়, ‘‘অস্থায়ী কথাটার অর্থ কী, তা সকলেই জানি। এর অর্থ, যার মেয়াদ এক সময় ফুরিয়ে যাবে। এবং ৭০ বছর পর তার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। এবং অস্থায়ী বলার ক্ষেত্রে ৭০টা বছর বোধহয় বেশ সমীচীন।’’ জয়শঙ্করের মতে, দীর্ঘ দিন ধরেই জম্মু ও কাশ্মীরে উন্নয়নের অভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্ম দিয়েছে। এবং সেই বিচ্ছিন্নতাবাদকে সন্ত্রাসবাদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।