বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: রয়টার্স।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হল। সরকারের প্রধান হলেন মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি নতুন সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর উপদেষ্টারাও শপথ নিয়েছেন। বাংলাদেশের বঙ্গভবনের দরবার হলে স্থানীয় সময় রাত ৯টায় শপথগ্রহণ শুরু হয়। ইউনূস শপথবাক্য পাঠ করেন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের উপস্থিতিতে। প্রধান উপদেষ্টার শপথ এবং গোপনীয়তার শপথ গ্রহণ করেন ইউনূস।শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতেই আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মণ্ডলীতে রয়েছেন ১৬ জন সদস্য। তাঁরা হলেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, হাসান আরিফ, তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, সুপ্রদীপ চাকমা, ফরিদা আখতার, বিধানরঞ্জন রায়, খালিদ হাসান, নুরজাহান বেগম, শারমিন মুরশিদ এবং ফারুকি আজম। এঁদের মধ্যে সুপ্রদীপ, বিধানরঞ্জন এবং ফারুকি ঢাকা নেই। তাই তাঁরা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ নিয়ে ইউনূস বলেন, ‘‘আমি বাংলাদেশের সংবিধানকে সমর্থন এবং রক্ষা করব। নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করব।’’
নবীন এবং প্রবীনের সমন্বয় দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের এই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীতে। বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল মঞ্চ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ এবং সজীব। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরাও। দু’জনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
শপথগ্রহণের শেষে আরও এক বার জাতীয় সঙ্গীত হয়। দেশের সামরিক এবং বেসামরিক ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং কূটনীতিকেরা অনুষ্ঠানের সময় বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে ইউনূসকে অভিবাদন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘‘মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর নতুন দায়িত্বের জন্য আমার শুভকামনা জানাচ্ছি। আমাদের আশা, বাংলাদেশের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে এবং হিন্দু-সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। দুই দেশের জনসাধারণের শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে বদ্ধপরিকর ভারত।’’
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে চলে এসেছেন হাসিনা। দেশ জুড়ে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন তিনি। আপাতত রয়েছেন দিল্লিতে। তাঁর পরবর্তী গন্তব্য কোথায়, এখনও তা স্পষ্ট করে জানা যায়নি। ভারত সরকার জানিয়েছে, হাসিনাকে আপাতত কিছু দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা কী, তা ভারত সরকারকে জানালে নয়াদিল্লি সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ জুড়ে অরাজকতা শুরু হয়েছে। কর্মবিরতির ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশের পুলিশ। একাধিক কারাগার থেকে বন্দিরা পালিয়ে গিয়েছেন বলে খবর। দেশের নানা প্রান্তে চলছে চুরি, ডাকাতির মতো ঘটনা। সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের একাধিক ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। নতুন সরকার গঠন হলে সেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছে ভারত।