বিদায়: মারিয়ুপোল থেকে কোনও মতে প্রাণ বাঁচিয়ে মানব করিডর ধরে জ়াপোরিজিয়া। তার পর সেখান থেকে লিভিভের ট্রেনে। এই শহরে পৌঁছে সীমান্ত পেরোলেই পোল্যান্ড। ঘরছাড়া মা ও সন্তান। ছবি পিটিআই।
এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে তাদেরই পড়শি দেশ রাশিয়া। গত এক মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে তাদের দেশের কয়েক হাজার নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রাণ গিয়েছে বলে দাবি করেছে ভলোদিমির জ়েলেনস্কি সরকার। এর পাশাপাশিই বিধ্বস্ত ইউক্রেনের শিশুদের জীবনও। এখনও পর্যন্ত
এই দুই দেশের দ্বন্দ্বে প্রাণ গিয়েছে কমপক্ষে ১৩৬টি ইউক্রেনীয় শিশুর। রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু সংক্রান্ত সংগঠন ইউনিসেফ গত কাল একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, ইউক্রেনে এখন অর্ধেকেরও বেশি শিশু ঘরছাড়া।
ইউনিসেফের তরফে ক্যাথরিন রাসেল জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই প্রথম কোনও দেশে এত কম সময়ের মধ্যে এত বেশি সংখ্যক শিশুকে ঘরছাড়া হতে হয়েছে। ইউনিসেফের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ইউক্রেনে মোট ৭৫ লক্ষ শিশুর মধ্যে এখন প্রায় ৪০ লক্ষই ঘরছাড়া। এদের মধ্যে একটা অংশ অন্য কোনও দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। আর বাকি অংশ নিজের শহর ও ঘরবাড়ি ছেড়ে ইউক্রেনেরই অন্য কোনও প্রান্তে রয়েছে। এদের কারও কারও সঙ্গে মা থাকলেও বেশির ভাগের সঙ্গেই বাবা নেই। তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রে লড়ছেন।
ক্যাথরিনের কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হয়তো কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে। শিশুদের নিরাপত্তা, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সবই এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুই শতাধিক শিশু এখন যুদ্ধে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কর্তারা উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, এই মুহূর্তে শিশু-সহ ইউক্রেনের বেশির ভাগ বাসিন্দাই যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবাটুকুও পাচ্ছেন না। কারণ অ্যাম্বুল্যান্স থেকে শুরু করে হাসপাতাল— রুশ হামলার হাত থেকে রেহাই মিলছে না কারওরই। বহু হাসপাতাল রুশ সেনারই দখলে। রোগীদের বর্ম হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
ইউনিসেফ সেই সঙ্গেই জানাচ্ছে, জনবহুল এলাকা বা সাধারণ নাগরিকদের নিশানা না করার প্রতিশ্রুতি তো রাশিয়া রাখেইনি, সেই সঙ্গে গোটা ইউক্রেনে পাঁচশোরও বেশি স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে তারা। খাবার, ওষুধ বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে ইউক্রেন জুড়ে পানীয় জলেরও হাহাকার চলছে এখন।
ক্যাথরিন বলেন, ‘‘মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে ইউক্রেনের শিশুদের উপরে। তাদের অবিলম্বে শান্তি ও নিরাপত্তা চাই। শিশুদের অধিকার রক্ষা করা হোক।’’